বরিশাল
১৭০০ টাকায় স্টল নিয়ে ২২ হাজার টাকায় ভাড়া
নামমাত্র মূল্যে ষ্টল বরাদ্দ নিয়ে লাখ লাখ টাকা ভাড়া বাণিজ্যে
নিজস্ব প্রতিবেদক।। বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্টল নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ নিয়ে লাখ লাখ টাকা ভাড়া বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল ক্লাবের অমৃত লাল দে মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের বরাদ্দকৃত স্টলের গ্রহীতা ও ভাড়াটিয়াদের নিয়ে সমন্বয় সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি।
এতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুখ হোসেন, কাউন্সিলর ও করপোরেশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে স্টলগ্রহীতারা দিচ্ছে মাসে স্টলপ্রতি সাড়ে সতের শ টাকা। আর তারা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিচ্ছে ২২ হাজার টাকা করে। আবার ২০ লাখ টাকা বা ৪০ লাখ টাকা অ্যাডভান্স তো নেয়া হয়েছেই। কোথায় সতের শ আর কোথায় ২২ হাজার টাকা?
‘এ রকমই টাকা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিচ্ছে, যারা স্টল বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিয়েছে। একেক স্টলগ্রহীতা একেক অঙ্কের ভাড়া নিচ্ছে, যার অর্ধেকও পায় না সিটি করপোরেশন। যারা এমনটা করছে তারা জনগণকে ঠকাচ্ছে।’
যেসব গ্রহীতা অন্যদের কাছে স্টল ভাড়া দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে মাসিক আয়ের অর্ধেক সিটি করপোরেশন নেবে বলে জানান মেয়র।
তিনি বলেন, ‘এখন নির্ধারণ করা হয়েছে স্টলগ্রহীতারা যে ভাড়া তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে নিচ্ছে, তার অর্ধেক সিটি করপোরেশকে দিতে হবে। যদি কেউ তার নামে থাকা দুইটি স্টল ভাড়া দিয়ে ৪৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে, তাহলে ২২ হাজার টাকা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। জনগণকে ঠকানো যাবে না।’
তাৎক্ষণিক ভাড়া বৃদ্ধি
সমন্বয় সভায় মেয়র সাদিক এক স্টলগ্রহীতা ও তার ভাড়াটিয়াকে মঞ্চের সামনে এনে ভাড়া বিশ্লেষণ করেন। ওই স্টলগ্রহীতা সিটি করপোরেশনকে সাড়ে সতের শ টাকা ভাড়া দিয়ে আসছেন বলে জানান।
স্টলগ্রহীতার ভাড়াটিয়া জানান, তিনি মাসে ২২ হাজার টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন। স্টল নেয়ার আগে অগ্রিম ২০ লাখ টাকাও দিয়েছেন।
দুজনের বক্তব্য শুনে মেয়র স্টলগ্রহীতার উদ্দেশে বলেন, তাকে মাসে ১১ হাজার টাকা করে সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। প্রতি মাসে টাকা জমা না দেয়া হলে ভাড়াটিয়ার নামে সরাসরি স্টল বরাদ্দের এখতিয়ার রাখে সিটি করপোরেশন।
সভায় আনিস খান নামের এক ব্যক্তি নিজের নামে বরাদ্দ থাকা দুটি স্টল বাতিলের অভিযোগ করেন সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ঝাউতলা এলাকায় একটি ও নতুনবাজার মার্কেটে একটি স্টল ছিল তার। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিয়েও স্টল ফিরে পাননি।
আনিসের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘একজনের নামে দুইটি স্টল থাকায় তা বাতিল করা হয়েছে।’
আনিস খানের কাছে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মেয়র বলেন, ‘আপনার পরিবারে কার কার নামে কয়টি স্টল রয়েছে?’ জবাবে আনিস জানান, তার বাবার নামে একটি স্টল রয়েছে।
ওই সময় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ স্টলগ্রহীতা আনিসের কাছে তার ভাইয়ের নাম জিজ্ঞাসা করেন। আনিস জানান, তার ভাইয়ের নাম আজিজ শাহীন।
মেয়র প্রশ্ন করেন, ‘তার (আজিজ শাহিন) কি চাকরি আছে সিটি করপোরেশনে? তার চাকরি নেই। কেন নেই, সেটা সবাই জানে। সে বরিশালবাসীকে ঠকিয়েছে। সে বরিশালের জনগণের সাথে বেইমানি করছে।
‘আপনার (আনিস) ভাই (আজিজ শাহীন) সিটি করপোরেশনে চাকরি করত বিধায় আপনি ওই স্টল বরাদ্দ পাইছিলেন।’
‘কাউন্সিলররা টেন্ডারবাজি করতে পারেন না’
সভায় একাধিক স্টল বরাদ্দ পাওয়া কাউন্সিলরদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বরিশাল সিটি মেয়র। তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী একজনের নামে একটার বেশি স্টল থাকার নিয়ম নেই। আমার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদশা কাক্কুর (মোশাররফ আলী খান বাদশা) নামে ২২টি দোকান ছিল। এখন কয়টা আছে? আসলে তো কাউন্সিলর হিসেবে সে দোকান রাখতেই পারে না। তারপরও আমার ক্ষমতা বলে তাকে বলেছিলাম, ‘আপনার ছেলে-মেয়ের নামে স্টল রাখেন, বাকিগুলা ছাইড়া দেন।’ সে দুই-তিনটা স্টল রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দিছে।
“আমি জানি অনেকের নামে চার থেকে পাঁচটা দোকান আছে, কিন্তু আমি এইসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আমি আপনাদের ঠকালাম না, বরিশালের জনগণকেও ঠকালাম না। আর ভাড়াটিয়াদেরও ঠকালাম না। আপনারা কেউ ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে কত ভাড়া নিচ্ছেন, সেটা লুকাইয়েন না। যদি ভাড়াটিয়া এসে আপনার ভাড়া নেয়ার গোপন এই বিষয়টি জানিয়ে দেয়, তাহলে স্টলগ্রহীতার নামে থাকা স্টল নিয়ে ভাড়াটিয়ার নামে স্টল দিয়ে দেব বাধ্য হয়ে।”
কাউন্সিলরদের দুর্নীতির আকাঙ্ক্ষার অভিযোগ করে মেয়র বলেন, ‘কিছু কিছু কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ভেবেছিল লুটপাট, লুটপাট আর লুটপাট করবে, কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। কাউন্সিলর হইছে জনগণের সেবা করার জন্য, টেন্ডারবাজি করার জন্য না। কাউন্সিলররা টেন্ডারবাজি করতে পারে না, সিটি করপোরেশনে লুটতরাজ করতে পারে না।
‘কাউন্সিলররা ঈদ কোরবানি করবে। তার টাকা কি এখন মেয়র দেবে? বিগত দিনে কাউন্সিলররা যে পরিমাণ লুটতরাজ করছিল, তা তো সবাই জানে। যেসব কাউন্সিলর এসব করতে পারতেছে না, তারা তো আমাকে সহ্য করতে পারবে না।’