পিরোজপুর
স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের নিয়ে জাতীয় পার্টির কমিটি!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকদল আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র জাতীয় পার্টির (জেপি) কমিটিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করেছে দলটি।
এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক দলের উপজেলা কমিটিতে দুজন সভাপতি ও দুজন সাধারণ সম্পাদক দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এ কমিটির অনুমোদন দেন। এতে উপজেলায় স্থানীয়ভাবে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনি জোমাদ্দারকে সভাপতি করা হয়েছে। তার বাবা আব্দুল মজিদ জোমাদ্দার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভান্ডারিয়া থানা (তৎকালীন) শান্তি কমিটির (পিস কমিটি) তৎকালীন সভাপতি।
কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিমকে। সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ধাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলুকে উপদেষ্টা সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদারকে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তার বাবা আশরাফ তালুকদার ছিলেন পিস কমিটির (শান্তি কমিটি) সাধারণ সম্পাদক। উজ্জ্বল নিজেও একসময় বিএনপির নেতা ছিলেন। তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম লাবু বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হলে জাতীয় পার্টিতে (জেপি) যোগ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হন উজ্জ্বল।
মনি জোমাদ্দার ও উজ্জ্বল তালুকদারকে কীভাবে জেপি’র নতুন কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হলো তা নিয়ে রয়েছে জনমনে প্রশ্ন। এলাকায় এ নিয়ে চলছে বিতর্কও।
অভিযোগ আছে জেপির ভান্ডারিয়া কমিটির সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার জোমাদ্দারের পরিবার নিয়েও। যুদ্ধকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আজিজ শিকদার, ভান্ডারিয়া সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খান এনায়েত করিমসহ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, সরোয়ার জোমাদ্দারের বাবা নুরুল হক জোমাদ্দার ছিলেন স্বীকৃত রাজাকার। যুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির বিভিন্ন অফিসিয়াল কাগজে আব্দুল মজিদ জোমাদ্দার ও আশরাফ আলী তালুকদারের সিল সম্বলিত স্বাক্ষর করা নথিও তাদের কাছে আছে বলে দাবি করেন তারা।
রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মনি ও উজ্জ্বলের বাবা-চাচারা ভান্ডারিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, লুট,অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপের অভিযোগও রয়েছে। তাদের সন্তানদের দিয়ে কীভাবে জাতীয় পার্টির (জেপি) উপজেলা কমিটি গঠন করে সেটি নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
এর আগে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর উজ্জ্বল তালুকদারের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগ ছিল। তার পৃথক দুটি আপত্তিকর ভিডিও এবং একটি অডিও ফাঁস হয়।
এসব ব্যাপারে মনি জোমাদ্দারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে তিনি পরিচয় জানার পর লাইন কেটে দেন। পরে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আতিকুল ইসলাম তালুকদারও একইভাবে এড়িয়ে যান।