বরিশাল
সেশনজটের সাগরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ৮ মাসেও মেলে না বর্ষের ফলাফল
নিজস্ব প্রতিবেদক : ৮ মাসেও মেলে না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) বিভিন্ন বিভাগের বর্ষের ফলাফল। ফলে সেশনজটে আটকে যায় শিক্ষার্থীরা। একটি বর্ষ থেকে আরেকটি বর্ষে উত্তীর্ণ হতে হলে তাকে কমপক্ষে আটমাস সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। এমন চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন বিভাগে। যেসব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি তাদের এক সেমিস্টারের ফলাফল পেতে সময় গুণতে হয় ৪ থেকে ৬ মাস।
হিসাব করে দেখা যায় দুই সেমিস্টারের অর্থাৎ বর্ষের ফলাফল পেতে সময় লাগে ৮-১০ মাস।অর্থাৎ ৮ মাসেও মেলেনা বর্ষের ফলাফল। অথচ,পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে সময় বাধা প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের।শিক্ষার্থীদের কাছে মনে হয় সেশনজটের সাগরে নিমজ্জিত তারা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ রয়েছে মোট ২৫ টি। বাংলা বিভাগ, গণিত, রসায়ন বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন বিভাগ, সমাজকর্ম, মার্কেটিং বিভাগ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি, মৃত্তিকা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, অর্থনীতি, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগসহ বেশকিছু বিভাগে ফলাফল দিতে সময় লেগে যায় ৫ থেকে ৮ মাস। যেসব বিভাগে সেমিস্টার, সেসব বিভাগে ফলাফল দিতে সময় নেয় ৩ থেকে ৬ মাস। আবার বর্ষ পদ্ধতি বিভাগ সময় নেয় ৬ থেকে ৯ মাস।
একদিকে ফলাফল দিতে দেরি, অন্যদিকে পরীক্ষা নিতে দেরি। এদিকে প্রায় বিভাগে রয়েছে শিক্ষক সংকট। গত ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বরে শেষ হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থবর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা। তাদের ফলাফল দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৯ মে।অর্থাৎ প্রায় ৫ মাস পরে ফলাফল। এ বিভাগে অন্য বর্ষের আরো বেশি সময় লেগে যায় বলছেন শিক্ষার্থীরা।
একই বর্ষের বাংলা বিভাগের বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, ফলাফল প্রদান করে অক্টোবরে। প্রায় ৭ মাস পরে ফলাফল দেয় এই বর্ষের পরীক্ষার্থীদের। রসায়ন বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ফলাফল দিতে সময় নিয়েছে ৬ মাস। লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল দিতে সময় লাগে ৬ মাস।
গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থবর্ষের ফলাফল দিতে সময় লেগেছে ৭ মাস। গণিত বিভাগের একটি সেমিস্টারের ফল প্রকাশ করতে সময় লেগেছে আটমাস। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সেমিস্টারের ফলাফল মেলে প্রায় ৭ মাস।
মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের একই অবস্থা। প্রায় সব বিভাগের চিত্র একই। তবে গড় হিসাব করলে পাওয়া যায় দুই সেমিস্টারের অর্থাৎ বর্ষের ফলাফল মেলে ৮ মাসেরও বেশি। ফলাফল দিতে দেরি হওয়ার কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের আন্তরিকতার অভাবের কথা বললেও শিক্ষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা।
এদিকে গত ২৩ জানুয়ারি ৮২ তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন হয় বহিঃস্থ শিক্ষকের পাশাপাশি দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের নিয়োগের কথা। যেটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।যাতে সেশনজট কমানো সম্ভব হয়।
এসব সংকটে সেশনজট কমানোয় যেন দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিটি বিভাগের জন্য রয়েছে মাত্র একটি কক্ষ, তাও সেটি মৌখিকভাবে। অনেক সময় শিক্ষকরা নিজের বসার স্থানও পায় না। একটা ছোট রুমে পাঁচ-ছয় জন শিক্ষককে গাদাগাদি করে বসতে হয়।তবে ভবন নির্মানের জন্য বর্তমান উপাচার্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান একটি সূত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা বহুবার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। সম্প্রতি দ্বিতীয় ফেস্টের কাজের জন্যেও আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। কয়েকমাসের মধ্যে ভিজিবিলিটি পরীক্ষা করতে আসতে পারেন তারা। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সংকট কাটিয়ে উঠতে।