বরিশাল
মাদক জুয়ার আড্ডায় পরিণত, ভাড়া ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত
সেবা নয়, ধ্বংসস্তূপের প্রতিচ্ছবি চরবাড়িয়া ইউপি ভবন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নীরব ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে আছে। একসময় যেখানে ব্যস্ততা ছিল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে, সেই ভবন এখন স্থানীয়দের চোখে মাদক বেচাকেনা, জুয়ার আসর ও নানা অনিয়মের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চলতে থাকায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। অথচ নিজস্ব স্থায়ী ভবন অকার্যকর রেখে ইউনিয়ন পরিষদের সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি ভাড়া করা অস্থায়ী কার্যালয়ে যা নিয়ে এলাকাবাসীর অসন্তোষ এখন চরমে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থায়ী ভবনটি অকার্যকর করে বহু বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি ভাড়া নেওয়া অস্থায়ী কক্ষে। যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোষর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ তার নিজ বাড়ির সামনে তালতলী বাজারে গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্যই পরিষদের কার্যক্রম ভাড়া কার্যালয়ে স্থানান্তর করেন। তার পর থেকেই অযত্ন ও অব্যবস্থাপনায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী ভবনটি। তবে সাবেক চেয়ারম্যান না থাকলেও এখনো কেন স্থায়ী ভবনে কার্যক্রম ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না তা নিয়ে এলাকায় চলছে তীব্র আলোচনা।
স্থানীয়দের মতে, সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ভাড়া অফিসে পরিচালনা করায় জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, “স্থায়ী ভবন খালি পড়ে আছে, অথচ বাসার সামনে করা অস্থায়ী অফিসেই সব কাজ হয়। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। পরিষদে যেতে হলে বাজারে যেতে হয়, ভিড়ভাট্টায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়াতে হয়।”
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী ভবনের জন্য যে জমি স্থানীয়ভাবে দান করা হয়েছিল, সেই জমিদাতারা এখন গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের অভিযোগ, বহুতল ভবন নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো স্থায়ী ভবনটিতেই প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। “যদি ভবন ব্যবহারই না হয়, তাহলে আমাদের জমি ফেরত দিন।” এমনটাই দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, “এলাকার এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমরা আগে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে অনিয়ম ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি আমি শুনেছি। স্থায়ী ভবন থাকা সত্ত্বেও ভাড়া করা অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা নিঃসন্দেহে তদন্তযোগ্য বিষয়। খুব শিগগিরই পুরো পরিস্থিতি যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ভবনে কার্যক্রম স্থানান্তর করা হবে। নতুবা বর্তমান স্থায়ী ভবনের সংস্কার করে অতি দ্রুত সেখানেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে।”
স্থানীয়দের মতে, চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ একসময় ছিল প্রশাসনিক সেবা প্রদানের কেন্দ্র। মানুষ নির্বিঘ্নে জন্মনিবন্ধন, বিভিন্ন সনদ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সেবা পেত এ ভবন থেকেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পরিষদকে তার মূল ভূমিকা থেকে বিচ্যুত করেছে। স্থানীয় শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, “একসময় এই ইউনিয়ন পরিষদ ছিল জনগণের আশ্রয়স্থল। এখন সেটি নিজস্ব ভবন ছেড়ে অস্থায়ী কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ। আমরা চাই পরিষদের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। জনগণের সেবা জনগণের স্থাপনায় ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।” স্থানীয়দের আশা, দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে স্থায়ী ভবনটিকে পুনরায় সচল করা হবে এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করে ইউনিয়ন পরিষদকে তার পূর্বের মর্যাদায় ফিরিয়ে আনা হবে।



