বরিশাল
সাদিকপন্থি পরিবহন শ্রমিক নেতা বহিষ্কার, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর নথুল্লাবাদস্থ বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিষ্ট্রেশন নং ১৩০/৭২) পকেট কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের বিরুদ্ধে। শ্রমিকদের নানা দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংগঠনটি গড়ে উঠলেও গত সাত বছরে হয়নি কোনো নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য আদালতের দারস্থ হলেও এখনও আলোর মূখ দেখেনি নথুল্লাবাদ বাস শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচন। বছরের পর বছর লাগামহীনভাবে চলছে সংগঠনটি।
সাত বছর আগে জাহাঙ্গীর হোসেনকে সভাপতি ও ফরিদ সর্দারকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের মৃত্যুর পর একাধিকবার শ্রমিকরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও নানান বাঁধায় তা আর হয়ে ওঠেনি। নির্বাচনের দাবিতে ২০২০ সালে বরিশাল সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন শহিদুল ইসলাম রিপনসহ কয়েকজন। সেই মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের দাবিতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। পাশাপাশি শ্রমিকদের কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে সংগঠনের নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন সরদারকে গতকাল মঙ্গলবার ১৮ জুলাই ইউনিয়ন থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ শ্রমিক নেতারা ওই অভিযোগ তোলেন। ফলে বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বহিষ্কৃত ফরিদ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী। সাদিকের একক আধিপত্যের যুগে নির্বাচন ছাড়াই কমিটি বহাল রেখে ফরিদ টার্মিনালের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন। সম্প্রতি সিটি নির্বাচনে সাদিকের চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলে আফতাব হোসেন বাস মালিক গ্র“পের সভাপতি হয়ে পুরো টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নেন।
শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ শাহাদত হোসেন লিটন জানান, সাদিকপন্থি শ্রমিক নেতা ফরিদ কস্তরী রেস্তোরাঁ থেকে অগ্রীম চল্লিশ লাখ টাকা ও তার মাসিক ভাড়া বিশ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড, দূরপাল্লার রুটের সার্ভিস চার্জ, শ্রমিক ইউনিয়নের স্টল ও কাউন্টারের জামানত এবং ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া বিএমএফ বাসের জামানত ও ভাড়ার টাকা এবং স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক এফডিআরের টাকা আত্মসাৎ ও শ্রমিক কার্ড বিক্রি করেছেন। গত ৫ জুলাই সাধারণ শ্রমিকরা সভা করে ফরিদের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। অভিযোগের জবাব চেয়ে সাত দিনের সময় দিয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল শ্রমিক ইউনিয়নের সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে তাঁকে ইউনিয়ন থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে বর্তমানে পকেট কমিটির পায়তারা করছে অপর একটি গ্রুপ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক বলেন, বরিশাল জেলা শ্রমিক দলের সহসভাপতি নুর আলমকে শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্বে আনার পায়তারা করছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এনিয়ে নথুল্লাবাদ শ্রমিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে যে আসবে সকলেই সেটা মেনে নিবে। অন্যথায় কেউ পকেট কমিটির চিন্তা করলেও টার্মিনালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবে। বর্তমানে সংগঠনটিতে প্রায় চার হাজারের অধিক শ্রমিক রয়েছে। প্রতিজনের মাসিক চাঁদা বিশ টাকা, প্রতিদিন মালিক সমিতি থেকে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা আয় রয়েছে শ্রমিক সংগঠনের। এছাড়া স্টল ভাড়া দিয়ে যে সকল টাকা আয় হয় এর বেশিরভাগ টাকাই লোপাট করছেন সংগঠনের কয়েকজন এমনটাই অভিযোগ সকলের।
কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা বিধান থাকলেও। ১১৩ জন শ্রমিক নিহতের কয়েক বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত কোনো পরিবার টাকা পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, পকেট কমিটি নয়, কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্বের হাতেই দেওয়া হোক শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালনার দায়িত্ব।