শিক্ষা
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভোগেন বেশি
দেশের পাবলিক তথা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বেশি হতাশাগ্রস্ত। তাদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮৩ জনই বিষণ্নতায় ভোগেন। তবে প্রাইভেট তথা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা তুলনামূলক কম হতাশাগ্রস্ত। তাদের মধ্যে হতাশায় ভোগার হার ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশা উপসর্গের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে জরিপ করেছে। তাতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে ভার্চুয়ালি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শীর্ষক জরিপের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হয়। এর ফলে তৈরি হতে পারে সমস্যা।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হতাশার বিভিন্ন উপসর্গ; যেমন- ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, কোনো কিছু উপভোগ না করা, ঘুমের ধরনের পরিবর্তন, আত্মহত্যার চিন্তা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারার মতো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিচ্ছেন। বাকি ২০ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে তাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।
সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার উপসর্গ নিয়ে তুলনা করলে দেখা যায়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার উপসর্গ অনুভব করার হার বেশি। ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তারা এ ধরনের বিষণ্নতার উপসর্গগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। বাকি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের মধ্যে হতাশার উপসর্গ দেখা যায়নি।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার চিত্র তুলনামূলক কম। ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা হতাশার উপসর্গগুলো অনুভব করেছেন। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ দশকিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা এ ধরনের উপসর্গের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন।
বিষণ্নতার যত কারণ
শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জরিপে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের হতাশার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বিভিন্ন কারণে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার কারণে হতাশায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিয়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, হল বা আবাসিক পরিবেশ নিয়ে ৯ শতাংশ, সহপাঠী বা শিক্ষকের বুলিংয়ের কারণে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উপরের সব কারণের জন্য এক দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাকি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য কারণে হতাশায় ভুগছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক, কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্প এডিডি ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।