বরিশাল
সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে বরিশালে সর্বোচ্চ সতর্কতা
- জনগণের নিরাপত্তাই এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার- পুলিশের কমিশনার
- পুরো নগরীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে আছেন- ওসি, কোতোয়ালী মডেল থানা
- আমরা অনেক বেশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছি- ওসি, বিমানবন্দর থানা
- দুই-তিন দিন ধরে আমরা বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি- ওসি, কাউনিয়া থানা
- নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি- ওসি, বন্দর থানার
মির্জা রিমন ॥ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নাশকতার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে গোটা নগরজুড়ে চলছে কড়া নজরদারি, চেকপোস্ট, টহল ও রাতের মহড়া। নগরীর তিনটি প্রধান প্রবেশদ্বারসহ ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। যেখানে প্রতিটি যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রবেশমুখ কালিজিরা ব্রিজ, গড়িয়ারপাড়, এবং দপদপিয়া এলাকায় জিরো পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। এছাড়া বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ ষ্ট্যান্ড, কাশীপুর, আমতলার মোড় ও সদর রোডের মতো ব্যস্ত এলাকাগুলোতেও একইভাবে তল্লাশি চলছে। শুধু পুলিশ নয় র্যাব, সেনাবাহিনী ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও একযোগে কাজ করছেন। যাতে কোনো প্রকার সহিংসতা বা নাশকতার সুযোগ না থাকে। সূত্র আরো জানায়, সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরজুড়ে সাঁজোয়া যান নিয়ে টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লঞ্চঘাট, রূপাতলী, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড ও কাশিপুর বাজারসহ জনবহুল এলাকাগুলোতে ডিবি ও সিটিএসবি টিম ভাগ করে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থায়ী নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে।
এদিকে, পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়ে সহিংসতার পরিকল্পনায় যুক্ত সন্দেহে আওয়ামী লীগের তিন নেতা-কর্মী ও যুবলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালী মডেল থানা ও কাউনিয়া থানা পুলিশ এসব অভিযান পরিচালনা করে। একই রাতে কাশিপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মিন্টু নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত এক ছাত্রলীগ কর্মীকে। যিনি কথিতভাবে সাবেক কাউন্সিলর লিটন মোল্লার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পুলিশের দাবি, তিনি ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির নামে হোয়াটসঅ্যাপে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তার সঙ্গে থাকা আরেক সহযোগীকে ধরতে অভিযান চলছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “১৩ নভেম্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কোতোয়ালী মডেল থানার উদ্যোগে বিশেষ টহল ও মহড়া পরিচালনা করা হয়। রাত ১১টার দিকে মেট্রোপলিটন পুলিশের সব ইউনিট একযোগে সমন্বিত মহড়া চালায়। পুরো নগরীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে আছেন।” তিনি আরও বলেন, “অরাজকতা বা সহিংসতার কোনো আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ ও সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে ৮টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।”
বিমানবন্দর থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন, “আমরা এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। নগরীর প্রধান সড়ক, পরিবহন টার্মিনাল এবং জনসমাগমস্থলগুলোতে পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও কাশিপুর এলাকার প্রবেশমুখে দুইটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নাশকতার প্রস্তুতি নিতে না পারে কেউ।” তিনি জানান, “মাঠে সাতটি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। কোনো সন্দেহজনক চলাচল বা সমাবেশের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “গত দুই-তিন দিন ধরে আমরা বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। নগরীর উত্তর ও পশ্চিম দিকের প্রবেশমুখগুলোকে নিরাপত্তার আওতায় আনতে মড়কখোলার পোল ও তালতলী ব্রিজ এলাকায় দুটি নতুন চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “প্রতিদিন টহল ও চেকিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে কাউনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যিনি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে কোনোভাবে নাশকতা সংঘটিত হতে না পারে।”
বন্দর থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “নগরীর দক্ষিণ অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের চারটি মোবাইল টিম দিনরাত মাঠে কাজ করছে। দিনারের পোল এলাকায় আগের নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি এবার তালুকদার মার্কেট এলাকায় একটি বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “বন্দর থানা এলাকায় নদীপথে যাতায়াতের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। তাই নৌপথ ও ঘাট এলাকাতেও টহল জোরদার করা হয়েছে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি।” আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ কঠোর প্রস্তুতি দেখে সাধারণ মানুষও কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোটা মহানগর এখন কার্যত পুলিশের “কন্ট্রোল জোন” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। কোনো ধরণের অরাজকতা, নাশকতা বা সহিংস কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। জনগণের জান-মাল রক্ষা ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এজন্য প্রতিটি থানাকে নির্দিষ্ট এলাকায় বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর কার্যক্রম সরাসরি মনিটর করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “১৩ নভেম্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব, ডিবি, সিটিএসবি এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা মাঠে রয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক, ঘাট ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে এবং কোনো পরিস্থিতিতেই যেন আতঙ্কের সৃষ্টি না হয়। জনগণের নিরাপত্তাই এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”



