বরিশাল
হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট দিয়ে তৈরী করা হয় পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট
সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা গ্রাস করেছে জলিল-কামাল গংরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা গ্রাস করেছে জলিল-কামাল গংরা। হাসপাতালের সামনে নিজ মালিকানায় ডায়গনস্টিক সেন্টার তৈরী করে কায়েম করেছে রোগী বাগানোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সদর হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে নিয়ে জলিলের মালিকানাধীন পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করে। আর এ কাজে জলিলের সাথে পুরো মাত্রায় সক্রিয় রয়েছে বর্হিঃবিভাগের চিকিৎসকদের এমএলএসএস কামাল।
সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে সদর হাসপাতালে এক্স-রে অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছে জলিল। এক্স-রে করার জন্য রোগীদেরকে হাসপাতাল থেকে কুটকৌশলে পাঠানো হয় নিজের মালিকানাধীন পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে। কখনো মেশিনে সমস্যা, কখনো এক্স-রে ফিল্মের সংকটতা, কখনো রেডিওলজিস্ট নেই বিভিন্ন অযুহাত তেরী করে নিয়ে যাওয়া হয় তার ডায়গনস্টিক সেন্টারে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট দিয়ে নিজের মালিকানাধীন ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট তৈরী করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
আর জলিলের এ কাজে সহযোগিতা জন্য রয়েছে নির্ধারিত একজন এমএলএসএস। যিনি কিনা ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে প্লেট নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। তার জন্য ওই এমএলএসএকে প্রতিটি এক্স-রে থেকে দেয়া হয় পার্সেন্টিজ। শুধু এক্স-রেই নয়, রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধরণের টেস্টের রোগীও বাগিয়ে নেয়া হয় ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারে।
সরেজমিন সূত্রে, জলিল ও কামাল গংরা সদর হাসপাতালে রোগীর দালালির নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখতে বাস্তবায়ন করেছে দুস্তরের সিন্ডিকেট। এর মধ্যে এমএলএসএস কামাল গ্রুপরা বর্হিঃবিভাগ চিকিৎসকদের কমিশনের মাধ্যমে রোগীদের পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে এবং অপর গ্রুপটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের দালাল, যারা হাসপাতালের বারান্দায় ওঁৎ পেতে থাকে রোগী ধরার জন্য।
এছাড়া হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের স্টাফদেরকেও জলিল ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় এই সিন্ডিকেটের আওতায় এনেছে। রোগী আসলেই বিশেষ করে দূর-দুরান্তের কিংবা মহিলা রোগীদেরকে প্যাথলজির স্টাফরা বলে দেয় এই টেস্ট এখানে হয়না। মেশিন নষ্ট আপনারা রাস্তার ওপাশে পদ্মা ডায়গনস্টিকে যান। বছর জুড়ে চলতে থাকা রোগীর সাথে এমন প্রতারণা। সদর হাসপাতালকে একটি নামকাওয়াস্তে হাসপাতাল বানানোর হীনচেষ্টার মধ্য দিয়ে পোয়াবারো হচ্ছে জলিল-কামাল গংরা।
এরা প্রত্যেকেই বিএনপিপন্থী স্বাস্থ্যসেবা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছিলেন। এখন নিজেদের ডায়গনস্টিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকার দলীয় তোকমা লাগাতে ব্যতিব্যস্ত তারা। এদিকে সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে রয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ ঠিক রাখতে রয়েছে ওয়ার্ড মাস্টার। এদের মাসিক বেতন ভাতাদিসহ হাসপাতালের অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ব্যয় কোষাগার থেকে নিয়মিত পরিশোধ করা হলেও প্রতিনিয়তই ইমেজ সংকটের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালটি। ভাবমূর্তিও খুন্ন হচ্ছে সরকারের।
হাসপাতাল জুড়ে কেন এই ইমেজ সংকটের কারণ? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, জলিল ও কামাল সিন্ডিকেটের রোগী ধরার ফাঁদ কিংবা হাসপাতালকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানানোর মিশন রুখে দেয়ার কেউ নেই। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিলেও নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এমনকি নিউজ প্রকাশিত হলেও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির সার্বিক তত্বাবধানকারী বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনের সাথে এহেন কর্মকান্ড নিয়ে এর আগে একাধিকবার কথা বললে তিনি বলেছিলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কতবার অভিযোগ দিলে তিনি পদক্ষেপ নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাসপাতালে যারা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে তদন্ত কমিটি করে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অথচ বিগত দিনে সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় এমন শকুনি থাবা নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে নামকাওয়াস্তে তদন্ত বোর্ড করে পরিস্থিতি চাপা দেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালটিতে রোগীর এ অকল্যান বন্ধ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ বাসুদেব বলেন, সদর হাসপাতালে এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে আমি সিভিল সার্জনকে দেখতে বলবো। এরপরও যদি পরিবেশ ঠিক না হয় তাহলে আমি নিজেই পদক্ষেপ নেবো। অপরদিকে সদর হাসপাতালে এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে একাধিক ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা বলেন, রোগী গেলেই ঔষধ প্রতিনিধিদের মতো ডায়গনস্টিকের দালালরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বলে, হাসপাতালে এই টেস্ট হয় না।
তাদের নিজস্ব ডায়গনস্টিক দেখিয়ে বলে, ওখানে এই টেস্ট হয়। এমনকি হাসপাতালের প্যাথলজিতে গেলেও একই কথা বলা হয়। মাঝে-মাঝে হাসপাতালে দালালদের মধ্যে রোগী বাগানো নিয়ে হাতাহাতি হয়। পরিবেশটা এমন হয় যেনো হাসপাতালটি অভিভাবকহীন। একদিকে ঔষধ কোম্পানির উৎপাত অপরদিকে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডায়গনস্টিক সেন্টারের দালালরা। এসময় ভুক্তভোগী সূত্র আরো বলেন, এই উৎপাত বন্ধ করাতো বেশি কঠিন নয়, হাসপাতালের মধ্যে সিসি ক্যামেরা রয়েছে সেই ফুটেজ দেখেই তো দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সিভিল সার্জন।
এদিকে সদর হাসপাতালের রোগী বাগানো ফাঁদের হোতা জলিল বলেন, আমাদের রোগী টানাহেঁচড়া করা লাগে না কারণ আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক পুরানো। আগে থেকেই বেশ পরিচিতি রয়েছে। এগুলো করে যেসব ডায়গনস্টিক সেন্টার এখানে নতুন এসেছে। তাহলে হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট রয়েছে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। আপনিতো সদর হাসপাতালের এক্সরে অপারেটর এবং আপনার ওখানে রোগী গেলেই কৌশলে রোগীকে পাঠানো হয় আপানার মালিকানাধীন পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট আপনার পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারের এক্সরে রিপোর্ট করে দেয়।
আর ওই এক্সরের প্লেট আনা নেয়ার জন্য আপনার রয়েছে একজন এমএলএসএস। এহেন বিষয়ে জানতে চাইলে জলিল রিপোর্ট প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।