বরিশাল
শ্রেণিকক্ষে জোয়ারের পানি, অন্যের বারান্দায় পাঠদান
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নব আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওঠে জোয়ারের পানি। ফলে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে চট বিছিয়ে ব্যবস্থা করা হয় পাঠদানের। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তাতেও ঘটে বিপত্তি। অবশেষে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির বারান্দায় নেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের ক্লাস।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, সরকারি নির্দেশনায় দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়টি খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে জোয়ারের পানি ঢুকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার উপযোগী ছিল না। এ কারণে বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে সড়কের ওপর চট ও পাটি বিছিয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। আজও একইভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় সেখানে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। শিক্ষার্থীরাও এসেছিল। ঠিক সে সময় বৃষ্টি শুরু হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ব্যাপারীর ঘরে আশ্রয় নেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে ক্লাস নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দুর্গম অঞ্চল দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নতুন চর এলাকায় সন্ধ্যা নদীর কোল ঘেঁষে ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় বিদ্যালয়টির নাম ছিল দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ অঞ্চলের দরিদ্র ও অবহেলিত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী জমি দান করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন মিলে কাঠ, বাঁশ ও টিন দিয়ে স্কুলঘর নির্মাণ করেন। শুরু হয় পাঠদান। দুর্গম এই চরে বাতিঘর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতি বর্ষায় বিদ্যালয়ে ওঠে জোয়ারের পানি। মাঝে মাঝে শ্রেণিকক্ষেও প্রবেশ করে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম খান বলেন, ২০১৩ সালের ১ জুলাই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। নাম দেওয়া হয় ১৩০ নম্বর দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নব আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু জাতীয়করণের আটবছর পার হলেও বিদ্যালয়টি রয়ে গেছে অবহেলিত।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টি সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী চর এলাকায় হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের তিন মাস শ্রেণিকক্ষ ও যাতায়াতের পথ জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী কলাগাছের ভেলায় ভেসে বিদ্যালয় আসে। এছাড়া জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান অব্যাহত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরপরও অবহেলিত চর এলাকার শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে দ্রুত বিদ্যালয় ভবন বরাদ্দ না পেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকবর কবির বলেন, বাবুগঞ্জের ১৩৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩০নম্বর দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নব আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বড় নাজুক অবস্থা। নদীপাড়ের ওই এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে একটি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার চেয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ বিষয় মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।