বরিশাল
শেবাচিম হাসপাতালের প্রবেশপথ আটকে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অনেকটা রুদ্ধ হয়ে গেছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রধান প্রবেশপথ। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রের সম্মুখ বান্দরোড সড়কের কিছু অংশসহ ফুটপাত দখল করে রাখায় সেখান দিয়ে হাসপাতালে রোগী আনা নেওয়া এবং সাধারণ পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটি চলে আসলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অবৈধ ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বা নিচ্ছে না। তবে মাঝে মধ্যে ট্রাফিক পুলিশকে তাদের উচ্ছেদে উদ্যোগ নিতে দেখা গেলেও কয়েক ঘণ্টার মাথায় ফের দখল হয়ে যায়। অবশ্য এই কথা ট্রাফিক পুলিশের মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা স্বীকার করে নিজেদের অসহায়ত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, হাসপাতালের প্রবেশদ্বার আটকে এবং সামনের ফুটপাতে অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই সব প্রতিষ্ঠানের কারণে হাসপাতালে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে এবং কখনও কখনও সড়কে তীব্র যানজট গেলে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এলোমেলোভাবে বসায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে আগন্তক কয়েক হাজার রোগীর হাসপাতালে প্রবেশের ক্ষেত্রে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সূত্রটির অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশ এই অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তাদের মাঠপর্যায়ের সদস্য এবং হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীদের কারণে সফল হওয়া যাচ্ছে না। সূত্রটির দাবি, প্রতিদিন ট্রাফিক পুলিশের যে যে সদস্য ওই এলাকায় ডিউটি করেন তারা এবং হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী নিয়মিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি নির্ধারিত অংকের অর্থ নিয়ে থাকেন। এই অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ভীত অনেকটা মজবুত বলে জানা গেছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের মুল গেটের সামনে এবং ফুটপাতে ফল, চা এবং শরবত বিক্রিসহ অন্তত অর্ধশত ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসেছে। এর সামনে অপেক্ষ যাত্রী অপেক্ষায় রয়েছে অটোরিকশাসহ বেশকিছু যানবাহন। এমন সময় রিকশাযোগে আসা রোগী হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন।
রোগীর স্বজনেরা জানান, হাসপাতালের প্রবেশপথ আটকে দোকানগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে, এতে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশতো দূরের কথা রিকশা ঢুকতেও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। অনেক সময় এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দোকানিদের সাথে বসচাসহ হাতাহাতির মত ঘটনাও ঘটছে। এসময় ট্রাফিক পুলিশ সেখানে দায়িত্বরত থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও এনিয়ে মাথা ব্যথা নেই।
তবে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা আব্দুর রহিম দাবি করেছেন, সড়ক বা ফুটপাত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব তাদের না হলেও এখন পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালের সম্মুখে ওই স্থানে অন্তত ২০ বারের বেশি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ফের দখল হয়ে যায়। তাহলে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট কী করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাদের কোনো সদস্য ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয় এই তথ্য জানা নেই। কিন্তু তারা সেখানে ডিউটি পালনকালে কীভাবে ফের বসছে, এমন প্রশ্ন নানান সন্দেহ সৃষ্টি করতেই পারে বলেন, এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, ট্রাফিক পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চাইলেও মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত সদস্যদের কারণে যেমনটি পারছেন না তেমনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের কতিপয় কর্মচারীদের স্বার্থ এখানে নিহিত থাকায় তারাও অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে অগ্রসর হচ্ছে না। বরং কেউ কেউ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে প্রতিবাদ করতে ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েছেন বলে উদাহরণ রয়েছে। ফলে ইজ্জত রক্ষায় এখন বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
এই বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে না হলেও অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অপসারণে ট্রাফিক পুলিশের সহায়তা বিগত সময়ে নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। এবং ট্রাফিক পুলিশ কয়েকবার উচ্ছেদও করেছে। কিন্তু তারপরেও ব্যবসায়ীরা হাসপাতালের মূল ফটক আটকেসহ ফুটপাতে বসছে। বিষয়টি নজরে এসেছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের গেট আটকে বসার নেপথ্যে কোনো অর্থ বাণিজ্য হয় এবং এতে যদি তার কোনো কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আবারও উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
অনুরুপ প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের জানতে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাতকে একাধিকার ফোন করা হলেও অপরপ্রাপ্ত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।’