কলাপাড়া
শেফালী বেগমের পায়ের হাড় গুঁড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ‘স্যার আমি কি আর হাঁটতে পারবো না’, হাসপাতালের বেডে শুয়ে এমনভাবেই আকুতিমাখা প্রশ্ন শেফালী বেগমের। তবে চিকিৎসকও জানেন না তিনি আর কোনোদিন হাঁটতে পারবেন কিনা। স্বামী পরিত্যক্ত মধ্যবয়সী নারী শেফালী বেগমকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে সন্ত্রাসীরা। দুর্বৃত্তরা শেফালী বেগমের দুই পায়ের হাড় গুঁড়িয়ে দিয়েছে, কেটে নিয়েছে রগ। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে (১০ অক্টোবর) ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন চালিয়ে তার দুই পা রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং রামদার উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে হাড় গুঁড়িয়ে দেয়। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে শেফালী বেগমের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে দেখতে পায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তার পায়ের ভাঙা অংশ কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। পরে তাকেসহ পরিবারের তিন জনকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শেফালী বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
জানা যায়, শেফালী বেগম ঢাকায় ইট ভাঙা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ পর বাড়িতে ফিরে পৈত্রিক ভিটায় ঘর তোলেন। কিন্তু চলাচলের জন্য রাস্তা দিতে অপারগতা জানায় প্রতিপক্ষের লোকেরা। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকে চার ফুট প্রশস্ত রাস্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিপক্ষরা এ সিদ্ধান্ত না মেনে ওই পরিবারকে এলাকা থেকে চিরদিনের জন্য উৎখাত করতে এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। শেফালী বেগমের ছেলে আলামিন (৩৫) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী মাকে রক্ষা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমাদের বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করে। আমরা মাকে ওদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনি, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণে তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। বাড়ির চলাচলের পথের সীমানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে আত্মীয় ও স্থানীয় সন্ত্রাসী মোবারক ফকির, কাশেম ফকির, বাবুল ফকির, নাসির ফকির ও মিরাজসহ ১০ থেকে ১২ জন ঘণ্টাব্যাপী আমার মায়ের ওপর নির্যাতন চালায়।
প্রতিপক্ষের লোকদের কাছে এই বিষয় জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘জনমের হাঁটা হাঁটামু রাস্তা দিয়া। এমন কাজ করে দিয়েছি ঘরেই থাকতে পারবে, চলাচলের জন্য আর জায়গা লাগবে না।’ কলাপাড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মাহমুদুর রহমান জানান, শেফালীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তার পায়ের হাড় বিভিন্ন স্পটে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় চাকুর কোপে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।