বরিশাল সদর
ঘটনার আগেই ইউএনও-ওসির বদলির আদেশ
রিলিজ হচ্ছে না ওসি নুরুল ইসলাম
সৈয়দ বাবু ॥ বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান গত ১০ আগস্ট স্বেচ্ছায় বদলি নিয়েছেন। অপরদিকে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম (পিপিএম) কে গত ১৮ আগস্ট দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়। বরিশালের শীর্ষ পর্যয়ের এই দুই কর্মকর্তার বদলির পরে তাদের সাথে মেয়র ও তার সর্মথক এবং বিসিসির কর্মকর্তদের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে জনমনে বেঁধেছে রহস্যের জট।
এটা কি পরিকল্পিত না স্বাভাবিক ঘটনা? দুই কর্মকর্তার বদলির বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানিয়েছেন, ইউএনও মুনিবুর রহমানের বদলি তার স্ব-ইচ্ছায় গত ১০ আগস্ট হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে। কিন্তু উপজেলার এসিল্যান্ড করোনা আক্রান্ত থাকায় তাকে কাজ চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিলেই ইউএনও তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবেন।
এছাড়া গত ১৮ আগস্ট সকালে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামের বদলির আদেশ হয় সিলেট রেঞ্জে। তবে আজ তার শেষ কর্যদিবস হলেও বরিশাল থেকে রিলিজ হচ্ছে না ওসি নুরুল ইসলাম বলে জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ আশরাফ আলী ভূঞা।
তিনি আরো বলেন, চলমান সমস্যার জন্য তার রিলিজ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে এদের বদলির কারণ ১৮ আগস্টের রাতের ঘটনায় নয়। তাদের বদলি ছিল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গত বুধবার পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের এআইজি শাহাজাদা মোঃ আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আদেশ দেয়া হয়। আদেশে ২৫ আগস্টের মধ্যে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন নুরুল ইসলাম।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন, তাদের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তা হতেই পারে। এটা নতুন কিছু নয়, এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
অপরদিকে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, অ্যাসোসিয়েশনের সব নেতা বিবৃতির বিষয়ে জানতেন না। সংগঠনটির সভাপতি সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার যিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম। তিনি বরিশাল সদর আসনের এমপি। গত ১৮ আগস্ট রাতে তার ছবি সম্বলিত ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করেই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিজ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে সচিব এমন বিতর্কিত বিবৃতি দিয়েছেন বলে অনেকের মন্তব্য। তবে বরিশালের সাধারণ জনতার মতামতে জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল একটি আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। চলছে কোভিট-১৯’র টিকা দান কার্যক্রম। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রতিটি টিকা কেন্দ্র নিজে পরির্দশন করছেন। একই সাথে তার নিজস্ব কর্মী দিয়ে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এমন সময় এমন একটি ঘটনা অনাঙ্কিত।
এ বিষয়ে বরিশালের বিশিষ্ট জন সৈয়দ দুলাল বলেন, আমরা আমাদের মেয়র ও প্রশাসন নিয়ে ভালোই আছি। একটি অপশক্তি শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার মিশনে নেমেছে। তবে এ মিশন সফল হবে না। এছাড়া এ ভুল বোঝাবুঝির এত সুন্দর সমাধানে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বরিশাল বাসী। গত রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকটি ফলপ্রসূ হওয়ার মধ্য দিয়ে বরিশাল সদর উপজেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনে চলমান থমথমে অবস্থার অবসান হয়েছে। ফলে চারদিন শেষে বরিশালে স্বস্তি ফিরেছে। গতকাল সকালেই কাজে যোগ দেন নগর ভবনের সব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৪টি করোনা টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত হন সিটি করপোরেশনের সব স্বেচ্ছাসেবক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এই সমঝোতায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া ছিল প্রশাসন, পুলিশ ও মেয়রপক্ষের যেন সম্মানহানি না ঘটে। যে যে অবস্থানে আছে সে অবস্থানে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। যেন একপক্ষ আরেকপক্ষের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সে অনুযায়ীই গত রবিবার রাতের বৈঠকে আন্তরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান করা হয়েছে।
ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, এখনো রিলিজ পাইনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেব। আর ওসি বলেন, এখনো লিখিত আদেশ পাইনি।
এদিকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাস ভবনে অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেয়া দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে বরিশাল কোতয়ালী থানায় করা দুটি মামলা এবং ইউএনও ও ওসির বিরুদ্ধে আদালতে দাখিল করা দুটি আবেদনের নিষ্পত্তি তদন্তের মাধ্যমে শেষ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশের তদন্তকারীরা ওই মামলাগুলো তদন্তের পর ফাইনাল রিপোর্ট দেবেন। এর মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।
বরিশাল বিভাগীয় বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিন-উল-ইসলাম হাবুল বলেন, রাজনীতিবিদ, সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন একে অপরের পরিপূরক। কাউকে ছাড়া কেউ কাজ বাস্তবায়ন করতে পারে না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, যাতে সামনের দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে পারি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারি সে রকমই একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন বরিশাল মহানগর কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, যে কোনো বিষয়ে রাজপথে কর্মসূচি থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু তা আদায়ে জনগণের ভোগান্তির সৃষ্টি হয় এমন আন্দোলন করা ঠিক নয়।