বরিশাল
সাওদা হত্যা
মৃত্যুদণ্ডিত আসামির সাজা কমে যাবজ্জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাওদা বেগম হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক ছাত্র রাসেল মাতুব্বরের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে তা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ পরিবর্তন করে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ওই জরিমানার টাকা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
ডেথরেফারেন্স ও খালাস চেয়ে করা আসামির আপিল আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিন-এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন। এর আগে মামলায় আসামির আপিলের পক্ষে শুনানি শুরু করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহাববু হোসেন। পরবর্তীতে মামলায় শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তার সঙ্গে ছিলেন এম মাসুদ রানা, মোঃ আসাদ উদ্দিন ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। শিশির মনির জানান, ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নামঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক ছাত্র রাসেলের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।
২০১৫ সালের ১ জুন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাওদা হত্যা মামলায় রাসেলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন বরিশালের আদালত। মামলায় মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুন বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আনোয়ারুল হক এই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয় রায়ে। এরপর রাসেল এর মৃত্যুদণ্ডের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং রাসেলের খালাস চেয়ে তার আইনজীবী এম মাসুদ রানা জেল আপিল করেন। সেই আপিলের শুনানি শুরু হয় ২০১৯ সালের ৯ মে। দীর্ঘ শুনানি শেষে এদিন রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল মিয়া মাতুব্বর (২২) ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ হত্যাকাণ্ডের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। একই উপজেলার আব্দুল রাজ্জাকের মেয়ে নিহত সাওদা (১৯) বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘প্রেমের সম্পর্ক রাখতে রাজি না হওয়ায়’ ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাওদাকে কুপিয়ে হত্যা করে রাসেল। আদালতের নথি সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অস্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় সাওদার সঙ্গে রাসেলের তর্ক হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাওদাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে রাসেল। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় সাওদাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ওই দিনই বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সাওদা।
এ ঘটনায় ৫ সেপ্টেম্বর রাতে সাওদার মা সাহিদা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে রাসেল মিয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর রাসেল পালিয়ে গেলেও এক সপ্তাহ পর ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বন্দর থানার কলসিদিঘী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাসেলের ছাত্রত্ব বাতিল করে। গ্রেফতারের পর ১৪ সেপ্টেম্বর রাসেল মিয়া ১৬৪ ধারায় আদালতের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এরপর ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন। এর পর ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন বরিশালের ভারপ্রাপ্ত দায়রা জজ এসএম নাসিম রেজা।
এরপর মামলার বিচার শেষে রাসেলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন বিচারিক আদালত।