বরিশাল
মাদক দিয়ে নাটকীয় কায়দায় যুবককে ফাঁসিয়ে দিল আর্মড পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে এক যুবককে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদসদ্যের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে এই নাটকীয় ঘটনায় ৪ হাজার টাকা লুফে নেওয়ার পর বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এপিবিএন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনা অবহিত হওয়ায়র পর তিনি বিষয়টি চেপে যেতে মিডিয়াকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ রাখেন। ঘটনার সাথে জড়িত একজন পুলিশ কনস্টেবল এই অভিযোগ স্বীকার করে মিডিয়ার কাছে সবিস্তার বর্ণনা দেন।
এখন বিষয়টি নিয়ে এপিবিএন পুলিশের ভেতরে তোলপাড় চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত সোমবার পড়ন্ত বিকেলে বরিশাল এপিবিএন ১০ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রমজান ও কনস্টেবল বেল্লাল এবং মাহিম মাদকবিরোধী অভিযানের নামে লঞ্চঘাট এলাকায় উপস্থিত হন। এসময় পার্শ্ববর্তী কলাপট্টির বাসিন্দা যুবক সিয়ামের কাছে গাঁজার সন্ধান চায়। অনেকটা ক্রেতার ছদ্মবেশে এসআই রমজান সিয়ামের কাছে গাঁজা ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে কলাপট্টির হেমায়েত উদ্দিনের পুত্র সিয়াম নিকটবর্তী রসুলপুর কলোনীর ইব্রাহিমের কাছে গাঁজার একটি চালান আছে বলে অবহিত করেন। এসআই একপর্যায়ে কৌশলে ইব্রাহিমের কাছ থেকে ১০০ গ্রাম গাঁজা ক্রয় করে নিয়ে আসেন। গাঁজার পোটলা নিয়ে আসা মাত্র সিয়ামকে আটক করে মোটা অংকের টাকা দেন-দরবার শুরু করেন।
এপিবিএন পুলিশের অপর দুই কনস্টেবল বেল্লাল ও মাহিম টাকা দেন-দরবারে ভুমিকা রাখেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে। হয় টাকা নচেৎ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আনুমানিক বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিয়ামকে নৌ-বন্দর এলাকায় বসিয়ে রাখা হয়। উপায়ন্ত না পেয়ে সিয়ামের ভাই ইসমাইল নিজের মোবাইল বিক্রি করে দিয়ে ৪ হাজার টাকা মাহিমের হাতে তুলে দেয়। টাকার পরিমান চাহিদার চেয়ে কম হওয়ায় এই কনস্টেবল তা ফিরিয়ে দিলে এস.আই রমজান এক ফাঁকে তা নিয়ে নেন। টাকা নিয়ে সিয়ামকে শর্ত অনুযায়ী ছেড়ে না দিয়ে এপিবিএন কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এসময় গাঁজা উদ্ধারে নৌবন্দর এলাকার বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে মামলার স্বাক্ষী হওয়ার অনুরোধ রাখেন। পুলিশের কান্ড দেখে হতবাক ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সিয়ামের পরিবার ঘটনাটি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে। ফলে নাটকীয় কায়দায় গাঁজা উদ্ধারের নামে যুবককে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি রাতেই মিডিয়ার দরজায় পৌঁছে যায়। ঘটনার সত্যতা জানতে কনস্টেবল মাহিমের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে সিয়ামের কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে এমনটি দাবি করে বলেন, ৪ হাজার টাকা তাকে দেওয়া হয়েছিল বটে।
কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। তবে কোনো এক সময় তাদের অজান্তে এসআই রমজান সেই টাকা নিজের পকেটস্থ করেন। অবশ্য বেল্লাল এই বিষয়ে কোনো কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করলেও অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই রমজানের বিরুদ্ধে টাকা গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেননি। উভয় কনস্টেবলের বক্তব্য টাকা নেওয়ার যুক্তিকতা হচ্ছে গাঁজা ক্রয়ে তারা ৪ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, সেই টাকা উত্তোলনে হয়তো এসআই রমজান এমনটি করতে পারেন। ঘটনাটি যখন বেশ খানিকটা গড়িয়ে যায় তখন এপিবিএন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহামুদুল হাসান ফেরদৌস ঘটনাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করে খবর প্রকাশ না করতে অনুরোধ রাখেন। ফলে প্রতীয়মান হয় সাজানো ঘটনা অবহিত হওয়ার পর শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা তিন পুলিশ সদস্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অবশ্য একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ফের তিনি বলেন, গাঁজা উদ্ধারের ঘটনা সঠিক, তবে টাকা গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছেন।
এদিকে পুলিশের এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ কলাপট্টি ও নৌবন্দর এলাকার লোকজন প্রতিবাদের পন্থা খুঁজছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাপর সংস্থগুলোর মধ্যেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও শেষান্তে আটক সিয়ামসহ ইব্রাহিমকে আসামি করে কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেছে।’