বরিশাল
মেয়র প্রার্থী নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে বরিশাল নগরী
মনোনয়ন দৌড়ে চাচা-ভাতিজার প্রতিদ্বন্দ্বিতা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিভাগীয় শহরের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছেন। তবে নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে চাচা-ভাতিজার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এরইমধ্যে কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। আওয়ামীলীগ সহ জাতীয় পার্টি (জাপা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) হয়ে প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন অনেকে। তবে বিএনপি শিবিরে এ নির্বাচন নিয়ে এখনও কোনো হৈ-চৈ দেখা যায়নি।
এদিকে নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহনের কথা জানালেও নগরবাসী কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নের দিকে। কাকে দেয়া হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন? কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? এমন প্রশ্নের উত্তরে মিলছে নানান ঘটনার ফিরিস্তি। নগরবাসীর কেউ কেউ মনে করছেন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকেই দেয়া হবে দলীয় মনোনয়ন। আবার কেউ ঝুকছেন তারই চাচা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের দিকে।
ইতিমধ্যে তিনিও বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দল তাকে মনোনায়ন দিলে সর্বস্তরের মানুষের বিপুল সাড়া পাবেন এবং বিজয়ী হবেন বলে আশাও প্রকাশ করেছেন। যদিও তিনি মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে অনেক দিন ধরেই নগরে গুঞ্জন ছিল। তবে এর আগে বিষয়টি তেমনভাবে খোলাসা করেননি। যদিও বিগত দিনগুলোতে বরিশালের রাজনীতিতে খোকন সেরনিয়াবাতের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না বললেই চলে। সেক্ষেত্রে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সাংগঠনিকভাবে বেশ সক্রিয় থাকলেও জনসম্পৃক্ততায় তার ভূমিকা ছিল নামমাত্র। তাছাড়াও বেশ কিছু বির্তকিত কর্মকান্ডের জন্য দেশজুড়ে সমালোচিতও হয়েছেন তিনি। এমন সব হিসেব মিলিয়ে কেন্দ্র যার অবস্থান টেকসই মনে করবে তাকেই দেয়া হবে দলীল মনোনয়ন। শুধু তাই নয়, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে বেশী গ্রহনযোগ্য মনে করবেন তার হাতেই তুলে দিবেন নৌকার দায়িত্ব।
তবে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহই দলীয় একক প্রার্থী বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. একে এম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, দলকে বাঁচাতে হলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্র বিকল্প নেই বরিশালে। তার নেতৃত্বে বরিশাল মহানগরে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। দলের সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল নগরকেও সুন্দর করে গড়ে তুলছেন তিনি। শান্তির নগরে টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহই আমাদের নৌকার একক প্রার্থী। আমরা এর বিকল্প কিছু ভাবছি না। যদি এর বাহিরে জননেত্রী শেখ হাসিনা কাউকে মনোনায়ন দেয় সেক্ষেত্রে দলের স্বার্থে সবাই মিলে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না তাদের দল। বিগত দিনে উপজেলায় কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কারণ হাসিনা সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, এতো নির্যাতনের পরও দলের বাইরে কেউ যায়নি, সেখানে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর বিএনপি এ নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না বলেই এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
চাচা-ভাতিজার বাইরে বার বার দলীয় মনোনায়ন চেয়েও না পাওয়া বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন এবারও মেয়রের মনোনায়ন চাইবেন। তফসিল ঘোষণার পর স্থানীয় গণমাধ্যমে মেয়র প্রার্থীর জানান দিয়ে এরই মধ্যে বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে তার। যদিও দলীয় মনোনায়ন না পেলে বিগত সময়ের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি। তবে প্রকাশ্যে আসা এই প্রার্থীর বাইরেও আওয়ামী লীগ ঘরোনার বর্তমান মেয়র বিরোধী একটি জোটও প্রার্থী জোগাড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এসবের বাইরে গত সিটি নির্বাচনে আলোচনায় থাকা একমাত্র নারী প্রার্থী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী এবারেও প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, আমদের দল ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত নেই। দল যা বলবে তাই। তবে নির্বাচনে জনগণ থাকবে কিনা, সেই বিষয়টি বিবেচনায় আমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো কিছুই দেখাতে পারেনি এখনো, সেক্ষেত্রে প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। নির্বাচন এখন নির্বাসনে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে আগে ভাগেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। সেই হিসেবে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সদস্যসচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসই হচ্ছেন প্রার্থী। যিনি গত নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। আর তার হয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন জাপা নেতা বশির আহমেদ ঝুনু।
প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নগরবাসীর সেবা করার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আমাকে দল আগাম মনোনায়ন দিয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ বরিশালের মানুষ উন্নয়ন চায়, আর বরিশালের উন্নয়নের জন্য আমি কাজ করতে চাই। অপরদিকে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীরাও বিভিন্ন সিটি নির্বাচনী মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির- মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বরিশাল জেলা সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়েরসহ তিনজনের মধ্যে যে কেউ বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য কে এম শরীয়াতুল্লাহ।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ এপ্রিল) ১৭তম কমিশন বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলমের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বিসিসি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে ও ভোট ১২ জুন।