বরিশাল
ভোলায় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে নিষেধাজ্ঞায় মাছ শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে মা ইলিশসহ মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে। চরফ্যাসনে হাটবাজার এবং মাছঘাটগুলোতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকাশ্যে বেচাকেনা হচ্ছে মা-ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ।
পাশাপাশি ভোলার দক্ষিণ উপকূলে গভীর সাগর থেকে মা ইলিশসহ নানা ধরনের মাছবোঝাই করে ঘাটে ফিরছে শতাধিক ফিশিংট্রলার। চরফ্যাসন উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, তাদের লোকবল ও যানবাহনের সীমাবদ্ধতা থাকায় অসাধু জেলেরা কৌশলে মা ইলিশ শিকার করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের মেঘনা বেতুয়াঘাট এবং পশ্চিমাঞ্চলের তেঁতুলিয়ার ঘোষেরহাট ঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বেড়িভাঙ্গা, খাজুরগাছিয়া, সামরাজ, কচ্চপিয়া, বকসী, শুকনাখালী, ড্রামখালী, মনুরা, ডাকাতিয়া, পাতিলা, কুকরী, ঢালচরসহ দক্ষিণের সাগর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত জলসীমায় মাছ শিকারের মহোৎসব চলছ। সামুদ্রিক মাছ বিক্রির জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঘাটে ঘাটে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছ উঠে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নিয়ে চালানো হচ্ছে রমরমা ব্যবসা। জানা গেছে ঘাটগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা নিয়ে একটি মহল প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে।
অভিযোগ উঠেছে, চরফ্যাসনের বিশাল জলসীমায় মাছ রক্ষার জন্য প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঘাটগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের ৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করা হলেও তা কেবলই কাগজে-কলমে। পর্যবেক্ষণে ঘাটে যাননি এই কর্মকর্তারা। কোনো কোনো সময় মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় টহল দিলেও বিশাল জলসীমার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।
সামরাজ ঘাটের ফারুক মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রকৃত জেলেরা সরকারি সহায়তা পান না। মহাজনদের দেনা মেটাতে বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে যান জেলেরা। আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করার বিষয় আমার জানা নেই।
জেলেরা তাদের তাগিদেই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাছ শিকারে যান।’ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি হারুন কিবরিয়া জানান, ‘ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকসহ উপকূলের জেলেরা।’ চরফ্যাসন উপজেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেছেন, মেঘনা-তেঁতুলিয়াসহ সাগর মোহনা পর্যন্ত চরফ্যাসনে প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার জলসীমা রয়েছে। বিশাল এই সীমানায় মাত্র ২টি টিম ব্যবহার করে জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
পাশাপাশি অভিযানের জন্য উপযুক্ত যানবাহনেরও অভাব। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন মা ইলিশসহ সমুদ্রিক মাছ শিকারের দায়ে ১৭টি ট্রলারকে ৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিলাম করা হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার মাছ।