বরিশাল
ভোলায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে অসহায় রোগীর স্বজনরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : রোগীকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন মো. মহিবুল্লাহ। কিন্তু চিকিৎসক ঢাকায় রেফার্ড করেন। ভোলা সদর হাসপাতাল থেকে ইলিশা লঞ্চঘাট পর্যন্ত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য কথা বললে তারা ১৫০০ টাকা দাবি করেন।
পরে হাসপাতালের বাইরের অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে কথা বললে তারা ৮০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু সদর হাসপাতালের বেসরকরি অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা ওই অ্যাম্বুলেন্সকে এখান থেকে রোগী নিয়ে যেতে দেবেন না বলে বাধা প্রদান করেন। পরে বাধ্য হয়ে সদর হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সেই ১৩০০ টাকার বিনিময়ে রোগী নিতে হয় তাকে।
ভোলায় হরহামেশা সিন্ডিকেট করে রোগীর স্বজনদের থেকে এমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালকরা। শুধু তাই নয়, রোগীর স্বজদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন অ্যাম্বুলেন্স ও অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালকের কারণে মাঝে-মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রোগী পরিবহনের জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে ও তার আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকে ২৫-৩০টিরও বেশি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স।
যার বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন। কয়েকটির চালক আবার অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক। কিন্তু রোগীর স্বজনরা এসব তথ্য জেনে ও না জেনে ওইসব অ্যাম্বুলেন্সে করেই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল ও ঢাকার নিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট করে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে নিচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া। এছাড়াও ওই হাসপাতালের সামনের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো উপজেলার অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী নিতেও প্রতিনিয়ত বাধা দেন মালিক ও চালকরা।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করে জানান, তার এক আত্মীয় ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে তাকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানকার চিকিৎসক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বললে তারা সিন্ডিকেট করে সবাই ১৮ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে কথা বললে তারা ১২ হাজার টাকা দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমরা ওই অ্যাম্বুলেন্সকে আসতে বললে এখানকার বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা বোরহানউদ্দিনের অ্যাম্বুলেন্স চালককে না আসার জন্য হুমকি দেন। এছাড়াও ওই অ্যাম্বুলেন্সটির পথরোধও করেন। এরপর আমরা ১৮ হাজার টাকা দিয়ে সদরের অ্যাম্বুলেন্স নিতে বাধ্য হই।
এদিকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সাংবাদিকদের দেখে পালিয়ে যান অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালকরা। এদের মধ্যে একজন অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে আসলে তার সঙ্গে কথা হলেও নাম-পরিচয় কিছু না বলে নিজেকে চালক হিসেবে অস্বীকার করেন তিনি।
অন্যদিকে মো. হাবিবুর রহামন বাবলু ও মো. আনিকসহ একাধিক অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, তারা তেমন বেশি ভাড়া নিচ্ছেন না। রোগীর স্বজনরা ভাড়া বেশি মনে করতে পারে, তবে একটু বেশি ভাড়া না নিলে তাদের পোষায় না। এছাড়াও তাদের কিছু চালক রয়েছে যারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তাই কিছু চালকদের কারণে তাদের বদনাম হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।
ভোলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি মো. মিলন হাওলাদার সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করলেও ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালকের কথা স্বীকার করে বলেন, অন্য উপজেলায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে যায়, আসার সময় সেখানকার অ্যাম্বুলন্স মালিক ও চালকরা রোগী আনতে দেন না। তাই আমরাও তাদের সদর হাসপাতাল থেকে রোগী নিতে দেই না। তবে রোগী নিয়ে তারা আসতে পারেন হাসপাতালে।
এছাড়া তারা সকল মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন ফিটনেসবিহীন অ্যাম্বুলেন্স না চালাতে। এমনকি সকল চালকের লাইসেন্স করাসহ অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালকদের অ্যাম্বুলেন্স না চালাতেও বলেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ভোলার সাত উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৯টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও জেলায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা শতাধিক।
ভোলা পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক জানান, অ্যাম্বুলেন্সসহ সকল ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন যানবাহন ও অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালকের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও সিন্ডিকেট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও রোগী এবং স্বজনদের হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিলে আইগনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।