চরফ্যাশন
ভোলায় নিখোঁজ ১০৯ জেলের পরিবার বেঁচে আছে খেয়ে না খেয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ সাগরে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ ভোলার চরফ্যাশনের ১০৯ জেলে ছয় বছরেও খোঁজ মেলেনি। দীর্ঘদিনেও সন্ধান না পাওয়ায় তাদের জীবিত থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্বজনরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নানা সংকটে ভুগছে জেলে পরিবারগুলো। অনেকে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। অনেকের সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। চোখেমুখে অন্ধকার দেখা এই পরিবারগুলো আর্থিক সহায়তা চায়।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর চরফ্যাশনের ঢালচর থেকে ৩১ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চট্টগ্রামের এসআরএলএন-৫ ট্রলিং জাহাজের ধাক্কায় উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কালাম খন্দকারের মালিকানাধীন ‘মা-শামসুন্নাহার’ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ২১ জেলে নিখোঁজ হন।
ট্রলারডুবির ১২ ঘণ্টা পর ট্রলার মালিকের ভাই হাফিজকে উদ্ধার করা হয়। এর ছয় দিন আরও তিন জেলের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৭ জেলে। দীর্ঘ সাত মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পরিবার ও আত্মীয়স্বজন নিখোঁজ জেলেদের অপেক্ষায় রয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে ১১ জন, ২০১৬ সাল ১৯, ২০১৭ সালে ৫, ২০১৯ সালে ৪৮, ২০২০ সালে ৯ ও সর্বশেষ ২০২১ সালে ৯ জন জেলে সাগরে নৌকা ডুবে প্রাণ হারান। এদের অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও অন্যদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ জেলেরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
নুরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা নিখোঁজ জেলে জামালের বাবা জাকির হোসেন জানান, তার ছেলে ২০১৯ সালের ১২ জুলাই সাগরে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন। সংসারের অভাবে মেটানোর জন্য ছেলেটা দিনরাত সাগরে পড়ে থাকতো। কূলে ফেরার দুদিন আগেই আকস্মিক এক ঝড়ে তাদের ট্রলার ডুবে যায়। সেদিন ট্রলারে থাকা অন্য জেলেরা বেঁচে ফিরলেও তার ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের নিখোঁজ জামালের বাবা রফিক বিশ্বাস জানান, সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ফিরে আসেননি তার ছেলে। ২০২০ সনের ১৮ জুন গভীর রাতে প্রচণ্ড ঝড়ে তাদের নৌকা ডুবে যায়। এসময় তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য জেলেরা ফিরে আসেন। কিন্তু তার ছেলের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় ভোলা সদর উপজেলার কুলগাজি গ্রামের নিরব মাঝির ট্রলার। সেই ট্রলারে থাকা ১১ মাঝি-মাল্লার মধ্যে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হলেও এখনও নিখোঁজ নিরব ও তার ছেলে রুবেলসহ আটজন। স্বজনরা ফিরে না আসায় জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পরিবার।
প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচে ট্রলারটি বানিয়েছিলেন নিরব মাঝি। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ধার করেন প্রতিবেশী ও এনজিও থেকে। স্বামী, সন্তান আর সম্পদ হারিয়ে এখন দিশেহারা নিরবের স্ত্রী খাদিজা।
বিবি খাদিজা জানান, পাওনাদাররা প্রতিনিয়ত তাডা দিচ্ছেন তাদের টাকার জন্য। দেনা পরিশোধ করার কোনো সামর্থ্য তার নেই। ছোট ছোট চারজন ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে তার সংসার চলছে। টাকার অভাবে তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।
সাগরে দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়াসহ নিখোঁজদের পরিবারকে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি চরফ্যাশন উপজেলার সভাপতি মো. সোহাগ।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ মিনার জানান, সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের সরকারি অনুদান দেওয়া হলেও নিখোঁজ পরিবার তা পাচ্ছে না। তাদের পরিবারকেও সহায়তার আওতায় আনার কাজ চলছে।