জাতীয়
ভাই-ভাবিসহ ৪ জনকে হত্যায় ছোট ভাইয়ের ফাঁসি
রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে বড় ভাই শাহীনুর রহমান, ভাবি সাবিনা খাতুন, তাদের ছেলে ১০ বছর বয়সী সিয়াম হোসেন মাহী ও ৮ বছর বয়সী মেয়ে তাসমিন সুলতানাকে কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ান রায়হানুল। পরের দিন ভোররাত ৪টার দিকে হাত-পা বেঁধে তাদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চারজনকে হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সাতক্ষীরা জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে এ আদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির নাম রায়হানুর রহমান। তিনি ওই উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান বেকার। তিনি বড় ভাই শাহীনুরের সঙ্গে থাকতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যান। আর সংসারে টাকা না দেয়ায় বড় ভাবির সঙ্গে রায়হানুরের ঝগড়া লেগেই থাকত।
এরই জেরে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে বড় ভাই শাহীনুর রহমান, ভাবি সাবিনা খাতুন, তাদের ছেলে ১০ বছর বয়সী সিয়াম হোসেন মাহী ও ৮ বছর বয়সী মেয়ে তাসমিন সুলতানাকে কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ান রায়হানুল। পরের দিন ভোররাত ৪টার দিকে হাত-পা বেঁধে তাদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। ওই পরিবারের চার মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে মরদেহগুলোর পাশে ফেলে রাখেন রায়হানুর।
বর্তমানে শিশু মারিয়া হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে।
এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শাশুড়ি অজ্ঞাত আসামি করে ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখা (সিআইডি) রায়হানুরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মণ্ডলের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রায়হানুর।
১৮ জন সাক্ষী ও রায়হানুলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রায়হানুর রহমানকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আসামি রায়হানুরের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করে। এ সময় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে মামলা থেকে অব্যহতি দেয় আদালত।
মামলার ১৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামি রায়হানুরের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল লতিফ জানান, হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস ১৬ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আদেশে আসামিকে সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য সময় দেয়া হয়েছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম হায়দার আলী বলেন, মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।