বরিশাল
ব্যাধিতে আক্রান্ত বরিশাল বিসিক
গ্যাস আর বিদ্যুৎ স্টেশন না থাকায় ১২ মাসে ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) বরিশালের উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ পলিমার অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নাজমুন নাহার রিনা বলেন, এগুলো থাকলে আমার এক টাকাও লস হত না, বরং উৎপাদন বাড়াতে পারতাম। গ্যাস না থাকায়, বিদ্যুৎ স্টেশন চালু না হওয়ায় উৎপাদনমুখী কারখানাগুলো বড় ব্যাধিতে আক্রান্ত। এগুলো না পারছি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে, আর না পারছি বন্ধ করে দিতে।
নাজমুন নাহার রিনা কারখানা চালু করার পর এই সংকট উপলব্ধি করতে পারলেও গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না মুনাফা খাটানো দুটি পোশাক কারখানা। শুধু গ্যাস আর বিদ্যুতের অভাবই নয়, প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পার হলেও উৎপাদনবান্ধব হয়ে ওঠেনি বরিশাল বিসিক। এখানে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। নেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন। নিরাপত্তার জন্য কোনো পুলিশ ফাঁড়িও নেই। ফলে সম্ভাবনাময় এই খাত নিয়তই ধুকছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।।
জানা গেছে, ১৯৬১ সালে ১৩০ দশমিক ৬১ একর জমি নিয়ে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে সেখানে ৪৪৬টি প্লট নির্মাণ করা হয়। জমির পরিমাণ অবস্থান ও ধরন ভেদে প্লটগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। ৩৭.৮৮ শতাংশ আয়তনের এ গ্রেডের প্লটের এককালীন দাম ধরা হয়েছিল ১১ লাখ টাকা, ২০.৬৬ শতাংশ আয়তনের বি গ্রেডের প্লটের দাম ৬ লাখ টাকা, ১৩.৭৭ শতাংশের সি গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ৪ লাখ টাকা এবং এফ গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ২ লাখ টাকা। সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে প্লটগুলোতে উন্নত ও অনুন্নত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত প্লট ১৬৫টি ও অনুন্নত ১৩৩টি। প্লটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭৫টি। পরবর্তীতে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ২৩০ একরে উন্নীত করে দেশের সবচেয়ে বড় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করা হয়।
পদ্মা সেতু চালুর পর ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে বিসিক। বন্ধ ইউনিটগুলো চালু হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তারা কারখানা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বিসিক অফিস জানিয়েছে, বর্তমানে বিসিকে ৪৭০টি প্লট রয়েছে। ১৭৭ জন ব্যক্তির অনুকূলে এরমধ্যে ৩৭৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উৎপাদনে আছে ১২৬টি শিল্প ইউনিট।
কারখানার মালিক জামাল হোসেন বলেন, গ্যাস না থাকায় প্রতিটি পণ্য উৎপাদনে বাড়তি খরচ হচ্ছে। আমাদের খরচ কম হলে অনেক কম দামে পণ্য বাজারজাত করা যেত। এখন সীমিত আয়ে টিকে থাকতেই কারখানা চালিয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। গ্যাসের দাবিতে এমপি-মন্ত্রীর কাছে অনেকবার গিয়েছি। তাদের প্রচেষ্টা থাকলেও আমরা গ্যাস পাচ্ছি না।
নাজমুন নাহার রিনা বলেন, বরিশাল বিসিকে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন থাকলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতো। শ্রমিকরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। শ্রমিক নিরাপত্তায় নেই কোনো পুলিশ ফাঁড়িও।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইজরাইল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-২ এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বিসিককে গুরুত্ব দিয়ে ওই এলাকার কাছেই আমরা ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপকেন্দ্র স্থাপন করেছি। কিন্তু ওই উপকেন্দ্রে জনবল এখনো নিয়োগ না হওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে উপকেন্দ্রটি চালু করা যাবে।
বিসিকে অগ্নিনির্বাপণ উপকেন্দ্র দরকার রয়েছে কি না জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান অসুস্থ জানিয়ে বক্তব্য দেননি।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, আয়তনের দিক থেকে দেশের বড় শিল্পনগরী বরিশালে। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিসিককে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক সহায়তা করা হচ্ছে। বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতোমধ্যেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি।