পটুয়াখালী
ঝুঁকিতে এলাকাবাসী
বেড়িবাঁধের ঢালে মাছের ঘের
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রাম এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ঢাল কেটে একের পর এক তৈরি করা হয়েছে মাছের ঘের। এলাকার প্রভাবশালীরা এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে বেড়িবাঁধের ঢালের মাটিসহ সরকারি খাসজমি ও খাস খাল দখলে নিয়ে মাটি কেটে ঘেরগুলোতে ইচ্ছামতো মাছ চাষ শুরু করে।
পাউবো বলছে, বেড়িবাঁধের নদীর তীরবর্তী অংশ পাউবোর জমি। বাঁধ থেকে নদীর তীরবর্তী ৭০ মিটারের মধ্যে মাটি কেটে ডোবা কিংবা গর্ত করা নিষিদ্ধ। এতে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু দখলদাররা এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেড়িবাঁধ ঘেঁষে মাটি কেটে সরকারি খাস খাল ও জমি দখলে নিয়ে এভাবে মাছ চাষের ঘের তৈরি করেছে। এর ফলে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকে ফসলি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ঘূর্ণিঝড়ের সময় উঁচু জলোচ্ছ্বাসে অন্যান্য সম্পদসহ জীবনহানির আশঙ্কাও রয়েছে।
কলাপাড়া পাউবো সূত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের অর্ধেক এলাকায়ই উত্তাল আগুনমুখা নদী বেষ্টিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ইউনিয়নবাসীকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৯৯১-১৯৯২ অর্থবছরে আগুনমুখা নদীর তীরে ২৪ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং সিডর পরবর্তী বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নকে রক্ষা করে এ বেড়িবাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গাবালী উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহরাজ বলেন, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধটি পুরনো টেকসই বাঁধ। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ বেড়িবাঁধ রক্ষা করেছে এলাকাবাসীকে। কিন্তু যেভাবে বাঁধের ঢাল ঘেঁষে মাটি কেটে গভীর ঘের করেছে, এতে করে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের নদীর তীরবর্তী ৭০ মিটারের মধ্যে কোনো গর্ত পর্যন্ত করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু যেভাবে বেড়িবাঁধ লাগোয়া মাটি কেটে ঘের তৈরি করা হয়েছে, তাতে বাঁধের ওই স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে।
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন এ বিষয়ে জানান, কোডালিয়া গ্রামের বড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেলে লবন পানি ঢুকে অন্তত ২৫০ হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হবে। লোনাপানিতে ক্ষেত নষ্ট হবে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে।
রাঙ্গাবালী ভূমি কার্যালয়ের ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান কোড়ালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঘেরটি তৈরি করার সময় সরকারি খাস খাল দখল করা হয়েছে। দখলদারদের নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা আসেননি।
এ ব্যাপারে মাহাবুব মীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জমি তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন। তবে কিছু জমি আছে সরকারি খাল। সে জমি বন্দোবস্ত পেতে ভূমি অফিসে আবেদন করা আছে বলে জানান তিনি।
ছোটবাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ বিএম আবদুল মন্নান হাওলাদার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এভাবে বাঁধের সঙ্গে ঘের করা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে পাউবো ও ভূমি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, দুর্যোগে মানুষের জানমাল, সম্পদ রক্ষা করে বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধ লাগোয়া মাছের ঘের তৈরি করার কোনো সুযোগই নেই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।