গৌরনদী
বৃদ্ধাশ্রমে প্রকৌশলীর মৃত্যু, জানাজায়ও ছিল না পরিবারের কেউ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রংপুরের বৃদ্ধাশ্রমের মারা যাওয়া এস এম মনছুর আলীকে (৭৫) পৈত্রিক বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামে দাফন করা হয়েছে। তবে এসময় তার পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিল না। দুঃসম্পর্কের কয়েকজন স্বজন ও গ্রামবাসী মিলে তাকে দাফন করেন।
জানা গেছে, কয়েকমাস আগে অসুস্থ অবস্থায় রংপুরের বকসা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলেন এস এম মনছুর। এরপর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন। তবে নিজের সম্পর্কে তেমন কোনো কথা বলতেন না তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বকসা বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য সচিব নাহিদ নুসরাত বলেন, কারও কাছে হয়তো খবর পেয়ে চলতি বছরের ২১ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বৃদ্ধ মনছুর আলী আমাদের এখানে আসেন। তিনি একা এসেছিলেন। এরপর থেকে তিনি আমাদের বৃদ্ধাশ্রমেই ছিলেন।
তিনি বলেন, এতদিন এখানে থাকলেও মনছুর আলী তার নিজের সম্পর্কে তেমন একটা কথা বলেননি। মারা যাওয়ার আগেরদিন গল্পের ছলে তিনি তার জীবনের অনেক কথাই বলেছিলেন। তিনি কোথায় চাকরি করেছেন, কোথায় বাসা, ছেলেমেয়ে কতজন এসব অনেক কিছুই বলেছেন।
নাহিদ নুসরাত আরও বলেন, রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন মনছুর আলী। রাতে বৃদ্ধাশ্রমে তার মৃত্যু হয়। এরপর মরদেহ তার খালাতো ভাই বাবুল গাজীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের বাসিন্দা ও এস এম মনছুরের দুঃসম্পর্কের এক স্বজন বলেন, মনছুর টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের সাবেক সিনিয়র অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি রংপুর ও ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় ছেলে মহিন সরদার ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ও ছোট ছেলে রাজু সরদার কাতার প্রবাসী। মনছুরের পৈত্রিক বাড়ি দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামে। তবে এখানে তার যাওয়া-আসা ছিল না। এখানে থাকা দুঃসম্পর্কের স্বজনদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এস এম মনছুরের ঢাকায় প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। ওই সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য তার ছেলে ও বোন ১০ বছর আগে তাকে ঢাকার বাসা থেকে বের করে দেন। এরপর তারা মনছুর মারা গেছেন বলে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে প্রচার করেন। পরে আর ওই বাসায় আশ্রয় না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন তিনি।
দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের বাসিন্দা কাজী আশিকুর রহমান রতন বলেন, এস এম মনছুরের মরদেহ বৃদ্ধাশ্রম থেকে দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামে নিয়ে আসলে দুঃসম্পর্কের কয়েকজন স্বজন ও গ্রামবাসী মরদেহ গ্রহণ করেন। সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তবে জানাজা ও দাফনে তার পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিল না। এটা সত্যিই দুঃখজনক। অন্তত এস এম মনছুরের বিদায়বেলায় তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিত থাকা প্রয়োজন ছিল।