জাতীয়
বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল
বিশেষ ইউনিট চালু থাকলেও নেই সুরক্ষার ব্যবস্থা
এস.এন.পলাশ ॥ কোনো পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট চালু হলেও সংগ্রহে নেই সুরক্ষার উপাদানগুলো। এদিকে দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর পুলিশের সকল ইউনিটে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো বার্তায় করোনাভাইরাস সম্পর্কে আতঙ্কিত না হয়ে এ ভাইরাসের যাতে বিস্তার না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন হতে সকল পুলিশ ইউনিটে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালকে কোয়ারেন্টাইন সুবিধাসহ সুরক্ষার উপাদান যেমন- হ্যান্ড গ্লাবস, এপ্রোন, মাথার ক্যাপ, বিশেষ মাস্ক ও শু কভার ইত্যাদি রাখার কথা বলা হলেও বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি। সুরক্ষার উপাদানগুলো না থাকার ব্যাপারে তত্বাবধায়ক ডা: জিসি মিস্ত্রি বলেন, আমরা একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করে রেখেছি এতে ৬টি বেড রাখা হয়েছে। কোন রোগী আসলে আমরা আলাদা করে রাখতে পারবো। তবে রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষার জন্য যে উপাদান রয়েছে সেগুলো এখনো আমাদেরকে সরবরাহ করা হয়নি। কিন্তু আপানারাতো স্থানীয়ভাবেও এসকল উপাদান ক্রয় করতে পারেন যেহেতু তেমন ব্যয়বহুল নয় বা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। এসময় তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত কোন পুলিশ সদস্যের মধ্যে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি তাই সুরক্ষার উপাদানগুলো এখনো ক্রয় করিনি। তবে শীঘ্রই এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এছাড়াও কোন রোগী আসলে অবস্থাভেদে আমরা শেবাচিম হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করে স্থানান্তর করতে পারবো। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকাও প্রেরণ করা যেতে পারে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার একটি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পুলিশ হাসপাতালটির প্রবেশদ্বারে করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য প্রচারণাও করা হয়েছে। এদিকে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে তবে সুরক্ষার উপাদাগুলো না থাকার বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। বরিশাল জেলা ও মেট্টোপলিটন পুলিশের চিকিৎসার জন্য বিশেষ এ হাসাপাতালটিই ভরসা। অপরদিকে বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: শাহাবুদ্দিন খান বলেন, বিভাগীয় হাসপাতাল হলেও কতিপয় সমস্যাও রয়েছে তবে করোনার ব্যাপারে আপাতত আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। যে আক্রান্ত হবে তাকেই কেবল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে। কিন্তু কেউ যদি সন্দিগ্ধ হয় তাহলে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে। এতে সুবিধা হলো অনাহুত আতংকগ্রস্থতা তৈরী হবেনা। আর এ হাসপাতালটি আরো উন্নত করার জন্য দাপ্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে কারন একটি বিভাগীয় পুলিশ হাসাপাতাল হিসেবে যে ধরণের প্রস্তুতি থাকা দরকার তার অপ্রতুলতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ ভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এর মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। তারা সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরে গেছে। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে এ তিনজনের পরিবারের ৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গতকাল শনিবার এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানায়, দেশে নতুন করে আরো দুজন করোনা ভাইরাসের রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের দেশে যারা করোনা ভাইরাস নিয়ে এসেছেন, আগে দুজন এবং পরে দুজন বিদেশ থেকে এসেছেন। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা এক রোগীর সঙ্গে থাকার ফলে আরেকজনেরও এই রোগ হয়। বিশ্বের ১০৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৩৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১১৯ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। দেশটিতে একদিনেই ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ জনে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৭৫ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইতালি সরকার।