মেহেন্দীগঞ্জ
বিধবা নারীকে কুপ্রস্তাব দিল মেহেন্দিগঞ্জ ছাত্রলীগ নেতা, আদালতে মামলা
রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ এক বিধবা নারী স্থানীয় সাংসদের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ডেকে এনে কুপ্রস্তাব দিয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা শাকিল বেপারী। প্রস্তাব প্রত্যাখাত হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল ক্ষুব্ধ হয়ে তার দলবল নিয়ে ওই নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। ২৭ আগস্ট দুপুরে স্থানীয় ডাকবাংলোর সম্মুখে প্রকাশ্যে এই ঘটনার সময় মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটে বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এ তথ্য দেন। নির্যাতনের শিকার মেহেন্দিগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম অভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে বরিশাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার ৪দিনের মাথায় ১ সেপ্টেম্বর মরিয়ম বেগম দুর জনপদ মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশালে আসেন এবং একজন আইনজীবীর সহায়তায় জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মামলায় মূল আসামি শাকিল বেপারী আরও ৫ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে, যে সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ তার ঘর নির্মাণে দুই বান টিন দেবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ডেকে আনে। এবং একটি আবেদন সঙ্গে করে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয়। এই কথায় তিনি একটি আবেদন নিয়ে ডাকবাংলোর সামনে আসা মাত্র দলীয় ওই সাংসদের উপস্থিতি তার সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। এসময় সাংসদ স্থানীয়ভাবে আয়োজিত দলীয় একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রস্তুতি ব্যস্ত থাকায় পরে আসার পরামর্শ দেন। এক প্রকার ডেকে এনে বিমুখ করায় ওই নারী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ছাত্রলীগ নেতা শাকিল বেপারী তাকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা দিয়ে কু-প্রস্তাব দেয়। এতে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হলে শাকিল বেপারী ও তার চার সহযোগী অমিত, আমু হোসেন, নিহার তালুকদার ও বাপ্পি একত্রিত হয়ে মরিয়ম বেগমকে টেনে হিচড়ে স্থান ত্যাগে বাধ্য করার সময় তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করে। মামলার এজাহাতে বলা হয়, আসামিরা এসময় তার হাতে থাকা আবেদনটি ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলার সময় কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। এসময় এই নারীর আত্মচিৎকারে লোকসমাগম ঘটলে তাদের সম্মুখেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং ইজ্জত লুণ্ঠন শেষে হত্যার করে লাশ নদীতে নিপেক্ষ করার হুমকি দেয়। নয়তো মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে বসতঘর থেকে উচ্ছেদের হুমকিও দেয়। মরিয়মের দাবি, ঘটনার অনুঘটক উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাকিল বেপারীসহ অপর হামলাকারীরা সকলে স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথের অনুগত এবং ছাত্র, যুব ও সেচ্ছাসেবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। শাকিল বেপারীর পিতা খোরশেদ আলম ভুলু মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান। এই নারী মামলা দায়েরের পূর্বে আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিডয়াকর্মীদের জানিয়ে ছিলেন তাকে বহুদিন ধরেই সাংসদ বিভিন্ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলে সময়ক্ষেপন করে আসছিলেন। ফলে এবার নিশ্চয়তা দিয়েই ওই নারীর কাছে ছাত্রলীগ নেতার দাবি ছিল, তার সাথে অভিসারে লিপ্ত হলেই মিলবে সহায়তা। এই ঘটনায় তিনি থানা পুলিশকে অবহিত না করে আদালতে আইনী আশ্রয় নিতে আসার হেতু জানতে চাইলে প্রতিত্তোরে জানান, শাকিলের পিতা খোরশেদ আলম ভুলু মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় সে বর্তমান সময়ে যেমন বেপরোয়া, তেমনি থানা পুলিশ তাদের প্রতি দুর্বল। আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্বামী পরিত্যাক্তা মরিয়ম বেগমের এজাহারটি আমলে নিয়ে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। ওই সমনে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর আসামিদের আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে সবে অবগত হয়েছেন। একজন নারীর সাথে এ ধরনের ব্যবহারে দল বা সংগঠনের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় শাকিল বেপারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।