বরিশাল
বাকেরগঞ্জ এতিমখানার নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুট
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ বেসরকারি এতিমখানাগুলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। বাকেরগঞ্জে অধিকাংশ এতিমখানার অস্তিত্ব কেবল সাইনবোর্ডে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নেই কোনো এতিম শিশু, তবুও চলছে এতিমখানা। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এতিমখানার নামে ভুয়া এতিমদের তালিকা করে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী প্রতারক চক্র। চিহ্নিত ওই প্রতারক চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনকে দেখা যায় নীরব ভূমিকায়। বছরের পর বছর ধরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের এই মহোৎসব বন্ধ করতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের জমজমাট ব্যবসা চলছে এই উপজেলায়। এভাবে বছরের পর বছর এতিমের নামে সরকারি টাকা লুটে খাওয়া হচ্ছে উপজেলার অনেক এতিমখানায়। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দিনের পর দিন এতিমের টাকা লুট হলেও দেখার কেউ নেই। সব কিছুকেই নিয়মে পরিণত করা হয়েছে।
উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী উপজেলায় ১৮ টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং এতিমখানা। এতিমদের সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। প্রতি মাসে তাদের ২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানা যায়, নেছারমহল দারুস ছুন্নত এতিমখানায় তালিকা অনুযায়ী ২৯ জন এতিমের জন্য মাসিক সরকারি বরাদ্দ ৫৮ হাজার টাকা হিসেবে বছরে প্রায় ৭ লাখ টাকা দেয়া হয়। অথচ ৫ মে অনুসন্ধানে দেখা যায় কোনো এতিম ছাত্র নেই এতিমখানায়। এতিমখানার সাইনবোর্ড পর্যন্ত দেখা যায়নি। দক্ষিণ নারাঙ্গল নেছারমহল দারুস ছুন্নত মাদ্রাসার সামনে নেছারমহল দারুস ছুন্নাত এতিমখানার নামে একটি পরিত্যাক্ত ভবন পড়ে রয়েছে। এতিম খানার বিষয়ে যানতে চাইলে ঐ মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক নাজমুল আলম জানান, নেছারমহল দারুস ছুন্নত এতিমখানার নিজেস্ব জমিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই খালি জমি পড়ে রয়েছে তাও এই মাদ্রাসার বাহিরে উওর নারাঙ্গল মৌজায়।
অপরদিকে দেখা যায় বাকেরগঞ্জ হাসাননগর ফাতেমাতুজ্জহরা এতিমখানার ঘরটির মধ্যে কিছুই নেই। জানালা-দরজা বন্দো। এতিম পাওয়া যায়নি। এতিমদের তালিকা দেখাতে পারেননি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবু -ছালে। তিনি জানান পাশেপাশে অনেক মাদ্রাসার কারনে তার এতিমখানায় ছাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ১৪ জন এতিম ছাত্র দেখিয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। পাদ্রীশিবপুর মোহাম্মাদিয়া এতিমখানা এতিম নেই। ৫৬ জনের ভুয়া তালিকা দিয়ে ২০২০/২০২১ অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ নিয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
একইভাবে চলছে বড় রঘুনাথপুর মরহুম আবদুল আলী এতিমখানা, মোহাম্মদিয়া হামিদিয়া এতিমখানা, পারশিবপুর সাতঘর এতিমখানা, চরাদি নেছারিয়া এতিমখানা, হাসিনা চৌধুরী এতিমখানা, পাটকাঠি নেছারিয়া এতিমখানা, দারুল আমিন এতিমখানা ও রোকন উদ্দিন ছালেহিয়া এতিমখানা। সরেজমিন গিয়ে একটি এতিমখানাতেও কোনো এতিম শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, আমি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি অনেক এতিমখানায় এতিম নেই। চেষ্টা চালাচ্ছি ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। তবে ওই সকল এতিমখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে আমাকে হয়তো এখান থেকে চলে যেতে হতে পারে। আমি উপরমহলের চাপে আছি। সবসময় সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। প্রভাবশালী মহল ভুয়া এতিমখানা গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রভাবশালী মহলের নাম জানতে চাইলে তিনি অফিসে এসে সাক্ষাতে কথা শোনার অনুরোধ করেন।