বরিশাল
বাকেরগঞ্জে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী, প্রশাসন নিরব
নিজস্ব প্রতিবেদক , বাকেরগঞ্জ, বরিশাল ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ফার্মেসি বা ঔষধের দোকান। ঔষধ প্রশাসনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অনেকেই ফার্মেসি দিয়ে বসেছেন ঔষধ বিক্রির ব্যবসায়। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ১৪ টি ইউনিয়ন জুড়েই লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ আর অপ-চিকিৎসার শিকার হচ্ছে উপজেলার সহজ সরল মানুষ। ফার্মেসী গুলোতে একদিকে যেমন নেই কোন প্রশিক্ষিত ফার্মাসিষ্ট অন্যদিকে অভিজ্ঞ সেলসম্যানও।
দেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়া নিম্নমানের বিভিন্ন কোম্পানির উপহার সামগ্রীর প্রলোভন ও অধিক মোনাফার লোভে পড়ে উপজেলার প্রত্যন্তঞ্চলে শুধু ফার্মেসী নয় মুদির দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ও চোরাইপথে আমদানীকৃত ইনডিয়ান ঔষধ। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে একাধিক মুদির দোকানে দেখা গেছে প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে এ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত দেদারছে বিক্রি করছে দোকানদার। যা সেবনে উপকার তো হচ্ছেই না বরং বাড়ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলায় প্রায় ২ শতাধিক ফার্মেসী রয়েছে যার অধিকাংশেরই নেই কোন ড্রাগ (পয়জন) লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট। তার ওপর একধিক ফার্মেসীতে একই সাথে গরু-ছাগল ও হাস-মুরগির ঔষধও বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারী না থাকায় দিন দিন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করেছেন সচেতন মহল।
এসব ফার্মেসি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ ভারতীয় সেক্সুয়াল ও নিম্নমানের নানা ধরনের ঔষধ বিক্রি করছে অবাধে। এ ছাড়া নেই কোনো প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট। ফলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে উপজেলা শহরের কাছাকাছি কালিগঞ্জ বাজার, নিউমার্কেট, ভবানিপুর বাজার, বাংলা বাজার, মহেশপুর বাজার, নিয়ামতি বাজার,বোতরা বাজার,শ্যামপুর বাজার,বোয়ালিয়া বাজার, লক্ষীপাশা বাজার,দাদুর হাট-বাজার, উল্লেখিত বাজারে সবচেয়ে বেশী ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ ছাড়া ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি পরিলক্ষিত হয়েছে।
২৯ মে অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, বাখরকাঠি বাজারে দত্ত মেডিকেল হল খুলে বসেছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাধব দত্ত। দত্ত মেডিকেল হল এর নেই কোনো লাইসেন্স অথচ ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ ছাড়া ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন এমন ব্যাক্তির নামেমাত্র মেডিকেল হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়াই ঐ এলাকার শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, এমনকি অন্তঃসত্তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার এই প্রতারনার ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতারণার মহাউৎসব।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছেন ওইসব মেডিকেল হল ও ফার্মেসী মালিকগুলো। কারণ ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে আসেন না। তারা তাদের পার্শ্ববর্তী বাখরকাঠী বাজারের দত্ত মেডিকেল হল এর শরণাপন্ন হয়ে রোগের বর্ণনা দিয়ে ওষুধ নেন। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাধব দত্ত। এছাড়াও বাখরকাঠী বাজারে স্বপন মেডিকেল হল, আগা বাকের ফার্মেসি সহ একাধিক ফার্মেসী গুলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রায় এজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ট্যাবলেট ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ, ভারতীয়, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের না ধরনের ঔষধ অবাধে বিক্রি করে আসছে।
ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারায় ‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামে উল্লেখ্য আছে, কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঔষধ বিক্রি হচ্ছে এসব মেডিকেল হল ও ফার্মেসীতে।
সাধারণ মানুষও কোন ঔষধটি আসল ও কোনটি ভেজাল তা চিহ্নিত করতে অপারগ। ঔষধের গায়ে মূল্য নির্ধারণ না থাকায় অধিক মূল্যে ঔষধ বিক্রি করে আসছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের বাণিজ্য দিন দিন জমজমাট হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলার অবৈধ ফার্মেসিগুলো সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের ভেজাল ঔষধ বেশি মূল্যে বিক্রি করছে, যা রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে উল্টো নানা উপসর্গের সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া অসচেতন রোগীদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে উল্লিখিত ঔষধের একই গ্রুপের নিম্নমানের ঔষধ সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শংকর প্রসাদ অধিকারী জানান, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত করতে পারতেছি না। এজন্যেই দিন দিন অবৈধ ফার্মেসি বেড়েই চলছে।