বরিশাল
বাকেরগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঈদের আগেই নতুন ধান কেটে ঘরে নিচ্ছেন কৃষকরা। ঈদ আনন্দ সামনে রেখে প্রাণভরে ধান কেটে মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষক ও কৃষাণীরা। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তবে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে চাষীরা।
চরাদী ইউনিয়নের বোরো চাষি কবির সরদার জানান, আরো ৮/১০ দিন পর পুরো দমে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। তবে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি না পেলে তিনি এবার কৃষিতে অনেক লাভবান হতেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে পৌর শহর সহ উপজেলায় ১৪ টি ইউনিয়নে হাইব্রিড বোরো, উফশী বোরো, ব্রি ধান ৭৪, ব্রি ৮৯, বিনা ১০ সহ স্থানীয় বোরো মোট ৫৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া ও প্রকৃতি ধান চাষের অনুকূলে থাকায় মাঠে তেমন কোনো রোগ বালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে ফলন ভাল হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড লোচনাবাদ এলাকার স্থানীয় কৃষক নুর ইসলাম মৃধা আগাম জাতের ধান চাষ করেছিলেন। এখন তিনি কাটছেন। এবং তার মাঠ থেকেই দুইজন শ্রমিক মাথায় করে ধানের আঁটি নিয়ে তার বাড়িতে ছুটছেন। তিনি আশা করছেন আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে তার ধান কাটা শেষ হবে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। কোনো প্রকার পোকার উপদ্রব ছিল না। তবে চৈত্র মাসের এই তাপদাহে অনেক কৃষকের মাঠে পানি শুকিয়ে গেছে। তারা যদি এখন মাঠে পানি না দিতে পারে তাহলে অনেক ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় কৃষিখাতে অনেক ব্যয় বেড়েছে।
গারুড়িয়া ইউনিয়নে ৯ নং ওয়ার্ড সাহেব পুর গ্রামের মৃত্যু হাতেম হাওলাদারের পুত্র আশরাফ আলী হাওলাদার ও আইয়ুব আলী হাওলাদার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হওয়ায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। একই ওয়ার্ডের কৃষি উদ্যোক্তা কবির মৃধা জানান তার ৪ একর জমিতে আগাম জাতের বোরো ধান রোপন করেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চমৎকার ফলন হয়েছে। তিনি আশাবাদী এ বছর সকল খরচ পুষিয়ে লাভে থাকবেন। তবে কৃষি অনুকরণের দাম বৃদ্ধি না পেলে তিনি আরো বেশি লাভবান হতেন।
পৌরসভায় ৯ নং ওয়ার্ডের কৃষক মো: লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে ধান জমির অবস্থা ভালো। এক সপ্তাহের মধ্যে তার জমির ধান কাটা শুরু হবে। তবে প্রথম দিকে বোরো ধানে বিভিন্ন রকম ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে মাঠে কিটনাশক দিতে হয়েছে। আমি ২০০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। সঠিক সময়ে টাকার অভাবে কিছু জমিতে শ্রমিক দিয়ে সঠিক সময় পরিচর্যা করাতে না পারায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছি। এ কারনে কিছুটা আর্থিক সমস্যায় আমাদের পরতে হয়েছে। তবে এখন জমির দিকে তাকালে মন জুড়িয়ে যায়। এবার বড় ধরনের ঝড় বা শিলা বৃষ্টি এখনো হয়নি যার দরুন বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুনীতি কুমার সাহা জানান, প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। উপজেলায় হাইব্রিড বোরো, উফশী বোরো, ব্রি ধান ৭৪, ব্রি ৮৯, বিনা ১০, সহ স্থানীয় বিভিন্ন প্রজাতির মোট ৫৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এখন চৈত্রের তাপদাহে অনেক কৃষকের মাঠে জমির পানি শুকিয়ে গেছে।
আমি সহ জেলার কৃষি কর্মকর্তারাও সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। তারা যেন তাদের বোরো ধানের মাঠে ৩/৪ ইঞ্চি পানি দিয়ে রাখেন। আমরা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দুই হাজার জন কৃষকদের ৫ কেজি উফসী ধানের বীজ, জনপ্রতি ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার দিয়েছি। এছাড়াও ৩০০০ জন কৃষকদের প্রত্যেককে ২ কেজি হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ দিয়েছি। কৃষকদের সাথে পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধকরন সভা করেছি। আমরাও আশাবাদী এ বছর বোরো ধান উৎপাদন আমাদের লক্ষ্য মাত্রা অতিক্রম করবে।