বরিশাল
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: প্রায় সোয়া কোটি টাকায় সংস্কার কাজে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজে ব্যপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকির অভাব এবং তদারক কর্মকর্তার যোগসাজগে ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের সংস্কার কাজে ব্যপক অনিয়মের বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপণা কমিটির সভায় একাধিক বার উত্থাপিত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপণা কমিটির সভাপতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ-এমপি কাজ পরির্দশন করে কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ঠিকাদার ও জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার নির্দেশ দিলেও বিষয়টি তারা আমলে নেয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সংস্কারে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৭ টাকা, পুরাতন ভবন সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও স্যানিটারি কাজে ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৭২ টাকা, চিকিৎসক কোয়ার্টার সংস্কারে ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩১ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির কোয়ার্টার সংস্কারে ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ওই চারটি প্রকল্পে মোট ১ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ২৬১ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কাজগুলো করার জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে মের্সাস বাবর অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। ১৫০দিন মেয়াদে গত ৫ ডিসেম্বর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।
চুক্তি অনুযায়ী পুরাতন এসব ভবন আস্তরকরণ, টাইলস, জানালায় লোহার গ্রিল, কাঠের দরজা, জানালায় গøাস, স্যানিটারি কাজ, বৈদ্যুতিক লাইন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে টাইলস স্থাপণ এবং রংসহ তিনটি ভবনে ১৯০ টি ক্যাটাগরিতে সংস্কার কাজ করার কথা রয়েছে। কাজটি বাবর এসোসিয়েটস পেলেও পটুয়াখালীর হায়দার খান নামে এক প্রভাবশালী ঠিকাদার সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, প্রভাব ঘাটিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন সাব ঠিকাদার। সরেজমিন দেখা যায়, পুরাতন ভবন, চিকিৎসক ও চতুর্থ শ্রেণির বাসভবনের ছাদ ও দেয়ালের খসে পড়া প্লাস্টার তুলে নতুন করে ১০০০ বর্গমিটার সিসি ও আরসিসি প্লাস্টার করার কথা থাকলেও খসে পড়া জায়গায় নামমাত্র প্লাস্টার কাজ করা হয়েছে।
দেয়াল ও ছাদের মরিচা পড়া রড ঘষামাজা করে প্লাস্টার করার কথা থাকলেও ঠিকাদার যেনতেনো ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের পুরুষ,মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড, অফিস কক্ষ, কর্মচারী ও চিকিৎসক বাসভবনে সাড়ে ১২০০ স্কয়ার মিটার নতুন টাইলস বসাতে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ধরা হয়। ঠিকাদার পুরানো কিছু টাইলসের স্থলে নিম্নমানের কিছু নতনি টাইলস লাগিয়ে পূরাতনের সাথে মিলিয়ে দিয়েছে।
ভবনগুলোর দরজা জানালায় নতুন চৌকাঠ, লোহার গ্রিল, কাঠের দরজা ও মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। নিম্নমানের অপরিপক্ক কাঠের দরজা ও জানালা লাগানো হয়েছে। বাথরুমগুলোতে লাগানো হয় বাজারের সবচেয়ে কম মূল্যের প্লাস্টিক দরজা।
পুরাতন ভবনের নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলার বারান্দায় লোহার গ্রিল লাগানোর কথা থাকলেও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে সাব- ঠিকাদারের লোকজন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে কিছু অংশে লোহার গ্রিল লাগালো হয়েছে। স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক লাইনের কাজেও অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
নতুন লাইট, ফোল্ডার, সকেট, তার, বোর্ড, সুইচ লাগানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কাজই করা হয়েছে পুরানো জিনিসপত্র দিয়ে। তিনটি ফ্যানে ব্যবহার করা হয়েছে একটি মাত্র রেগুলেটার। এছাড়াও স্যানিটারি কাজেও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন ওই সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও কর্মচারী জানান, মুল ঠিকাদার কাজ করেন না।
পটুয়াখালীর এক ঠিকাদার কাজ করেন। তিনি অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় মনগড়াভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যা সবই অনিয়ম দুর্নীতি। চুক্তিপত্র অনুযায়ী কোনো কাজ করছেন না। মানহীন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন। প্রায় সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও অর্ধেক টাকার কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেন তারা।
এসব অনিয়মের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মেসার্স বাবর অ্যাসোসিয়েটসের মালিক মো. মামুন বলেন, কাজটি আমি করছি না। পুটয়াখালীর হায়দার খান করছেন। তার সাথে যোগাযোগ করুন। সাব-ঠিকাদার হায়দার খান বলেন, কাজ নিয়ম মেনেই হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী কাজ তদারকি করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। এত কিছুর পরেও সিডিউল মোতাবেক কাজ হচ্ছে না।
কাজের তদারকী কর্মকর্তা উপসহকারি প্রকৌশলী সৈয়দ আল ইমরান বলেন, কিছু ভুল ত্রæটি হতে পারে তবে শিডিউল অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল গনী বলেন, অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যদি কোনো নির্মাণ সামগ্রী নিম্নমানের হয়ে থাকে তবে পরিবর্তন করে নতুন ভাবে কাজ করানো হবে।