বরিশাল
বাউফলে স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতনের পর তালাক নোটিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : যৌতুকের দাবি ও বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতনের পর তালাক নোটিশ পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বামী মো. শাহজাহান হাওলাদারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন স্ত্রী নাসরিন জাহান (২৭)।
ভুক্তভোগী নারী বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামের রেজাউল করিম মুন্সির মেয়ে। ঘটনার পর থেকে দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নাসরিন। অভিযুক্ত শাহজাহান হাওলাদার দশমিনা উপজেলার চরবোরহান গ্রামের আ. মজিদ হাওলাদারের ছেলে। সে পেশায় একজন মুহুরি। ঢাকা উচ্চ আদালতে কর্মরত আছেন।
গতকাল রোববার (৫মে) স্বামীর নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালত কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী নাসরিন জাহান। লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে নাসরিনকে বিয়ে করেন শাহজাহান। সম্পর্কে তারা আত্মীয় হন। তখন নাসরিন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। বিয়ের পর থেকেই ঢাকাতে ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। তাদের সংসারে দুই সন্তানও রয়েছে।
বিয়ের কিছুদিন যাওয়ার পর থেকে যৌতুকের মালামালের জন্য নাসরিনের ওপর পাশবিক নির্যাতন শুরু করেন স্বামী শাহজাহান। মেয়ের সুখের জন্য প্রায় চার ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক দেন নাসরিনের পরিবার। তারপরেও বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে নাসরিনকে পাশবিক নির্যাতন করেন স্বামী। এনিয়ে একাধিক বার সালিশ বৈঠকও হয়। গত জানুয়ারি মাসে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশ বৈঠকে বসেন। তখন জোর করে নাসরিন ও তার মায়ের কাছ থেকে শর্ত সাপেক্ষে আপোষ নামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
হঠাৎ চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাসরিনকে বেধরক মারধর করেন স্বামী। পাশের বাসার লোকজন ৯৯৯ এ কল করে পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে নাসরিনকে আড়াল করে রাখা হয়। ঘটনার পরের দিন নাসরিনের বাবা গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন নাসরিন। কয়েক মাস ধরে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন স্বামী। হঠাৎ করে গত ২০ এপ্রিল নাসরিনের ভাইয়ের হোয়াটসঅ্যাপে একটি তালাকের নোটিশ পাঠায় শাহজাহান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তিন বছরে আগে জমি কেনার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা নেয় শাহজাহান। জমির দলিল স্বামী- স্ত্রী উভয়ের নামে হবার কথা থাকলেও প্রতারণা করে শাহজাহান তার নিজের নামে দলিল করেন। ওই জমি বিক্রিতে বাঁধা দিলে নাসরিনসহ তার পরিবার প্রাণের হুমকি দেয় শাহজাহান।
ভুক্তভোগী নাসরিন বলেন, বিয়ের প্রথম থেকে আমার নামে পরকীয়া করার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন। আমার শরীরের সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ক্ষত এখনো আছে। সর্বশেষ আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।
তখন আমার বাবা গিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে সে আমার ও সন্তানদের খোঁজ নেন না। কয়েকদিন আগে জানতে পারি আমাকে তালাক নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এখন দুই সন্তান নিয়ে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি অত্যাচারের সুষ্ঠু বিচার ও সন্তানদের জীবনের নিশ্চয়তা চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শাহজাহান হাওলাদার বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন। নাসরিন একাধিক পুরুষের সাথে পরকীয়া প্রেম জড়িত। যার প্রমাণ রয়েছে। এনিয়ে টুকটাক ঝগড়া হত। পরে সালিশ বৈঠকে মীমাংসাও হয়। কিন্তু সে আপোষ নামার শর্ত ভঙ্গ করেছে তাই তাকে তালাক দিয়েছি।
সন্তানদের কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা আদালত সিদ্ধান্ত দিবে।’ এ বিষয়ে কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, নাসরিন নামে এক নারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দুই পক্ষকে নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করব।