বরিশাল
বাউফলে বর্ষার আগেই জলে গেল কোটি টাকার জিও ব্যাগ
বাউফল প্রতিবেদক ॥ ছোট হয়ে আসছে পটুয়াখালীর বাউফলের মূল ভূখণ্ড। তেঁতুলিয়া-করখানা নদীর তীব্র ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার ধুলিয়া, নাজিরপুর, কাছিপাড়া ও চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনরোধে নদীতীরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলার কয়েক মাসের মধ্যে তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কথা ভেবে আতঙ্কে আছেন নদীপারের মানুষরা।
জেলা পাউবোর তথ্যমতে, নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে করখানা নদীর পাশে কাছিপাড়া ইউনিয়নের বাহেরচর থেকে চর রঘুনদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৩০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। একই বছরের নভেম্বর মাসে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনরোধে নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী গ্রামের ব্যাপারী বাড়ি থেকে উত্তর দিকে ১০০ মিটার এলাকা ও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নিমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষায় ২০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তিনটি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মোট ২ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাছিপাড়া ইউনিয়নে করখানা নদীভাঙন রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার এক মাসের মধ্যে তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। একই চিত্র নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী ও ধানদী এলাকায় তেঁতুলিয়ার ভাঙন রক্ষায় ফেলা জিও ব্যাগের ক্ষেত্রে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি জিও ব্যাগে ৩০০ কেজি বালু ভরার কথা ছিল। ঠিকাদার ২০০ থেকে ২৫০ কেজি বালু ভরে নদীতীরে ফেলেছেন। এ ছাড়া বালুর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কাদামাটি মেশানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পানিতে ফেলার কিছুদিনের মধ্যে কাদামাটি ধুয়ে জিও ব্যাগগুলো অর্ধেক হয়ে যায়। এসব ব্যাগের অধিকাংশই নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে।
নিমদী গ্রামের বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে এসব ব্যাগ ফেলা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই জিও ব্যাগগুলো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কোনো কাজেই এলো না জিও ব্যাগ। অহেতুক খরচ করা হলা সরকারের কোটি টাকা। বর্ষা মৌসুমের আগে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বসতভিটা, ফসলি জমি ও স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছরের ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে বালুর বস্তা ফেলা হলে ভেবেছিলাম এবার বর্ষায় ভাঙন থেকে রক্ষা পাব। এখন দেখি বর্ষার আগেই বস্তাগুলো নদীতে ভেসে গেছে। বর্ষার মৌসুমের আগে স্থায়ী বাঁধ না দিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, জিও ব্যাগ প্রকল্প অস্থায়ী ব্যবস্থা। বাজার, স্কুল ও জনপদ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কংক্রিটের বস্তা ফেলে ভাঙন রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।