টপ নিউজ
বাংলাদেশে স্কাউটিংয়ে ইসলামী ভাবধারা
রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ ইসলামের মহান শিক্ষা হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্বভিত্তিক সাম্য, শান্তি ও নিরাপদে সহাবস্থান। এ ঐতিহ্যমণ্ডিত জনপদের নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্কাউটিংয়েও রয়েছে ইসলামী ভাবধারা। স্কাউটে দলগতভাবে বহুল পরিবেশিত নিবেদন : ‘বাদশাহ তুমি দ্বীন ও দুনিয়ার/হে পরোয়ারদিগার।/সিজদা লও হে হাজার বার আমার/হে পরোয়ারদিগার।/চাঁদ সুরুয আর গ্রহ তারা/জ্বীন ইনসান আর ফেরেশতারা/দিন রজনী গাহিছে তারা/মহিমা তোমার।/তোমার নুরের রৌশনি পরশি/উজ্জ্বল হয় যে রবি ও শশী/রঙ্গিন হয়ে উঠে বিকশি/ফুল সে বাগিচার।/বিশ্ব ভুবনে যাহা কিছু আছে/তোমারি কাছে করুণা যাঁচে/তোমারি মাঝে মরেও বাঁচে/জীবন সবার।’ (গোলাম মোস্তফা) স্কাউটিংয়ের মূল চেতনা হলো শারীরিক সক্ষমতা, শৃঙ্খলা, দলগত চেতনা ইত্যাদি। ইবাদতের মাধুর্যে ইসলামী মূল্যবোধ- এসব চেতনাকে সমর্থন করে। ইসলাম একটি সুস্থ-সক্ষম মানবগোষ্ঠীর ধারণা দেয়। সুস্থ শরীর ও সুন্দর মন পরস্পর পরিপূরক। শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে ইবাদতের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩) সুস্থ দেহ সুন্দর-সক্ষম মানবগোষ্ঠী বিনির্মাণে সহায়ক। এর থেকে রোগের প্রতিকার, প্রতিরোধ সম্পর্কে আমরা সঠিক ধারণা পাই। আমাদের শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কতই না দামি। আর এই সুস্থতা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন, তা হলো সুস্থতা ও অবসর।’ (বুখারি) ইসলাম নিথর-নির্জীব জীবনবোধের স্থলে ইবাদতের মাধুর্যে শরীর-স্বাস্থ্যের বিকাশকে উৎসাহ দেয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রণনৈপুণ্যের প্রয়োজনে তীর নিক্ষেপ, বর্শা চালনা, দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ অথবা উটের প্রতিযোগিতা ছাড়া (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই।’ (তিরমিজি) ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দুটির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল।’ (বুখারি-মুসলিম) আনন্দময় মুহূর্তে রণকৌশল প্রদর্শন ইসলামী ঐতিহ্য। আরবের ‘হাবশি’দের রণকৌশল প্রদর্শন প্রিয়নবী (সা.) পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.)-কে নিয়ে এমন প্রদর্শনী তিনি দেখে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা খুবই উত্তম আনন্দ…। (বুখারি) ঈদের আনন্দ প্রকাশের জন্য রণকৌশল প্রদর্শনকে ‘তাগলিস’ বলে। অর্থাৎ দফ বাজানো, তরবারি চালনা, বল্লম চালনা ইত্যাদি। বর্ণিত আছে, ‘হজরত আলী (রা.)-এর দৌড়ের গতি ছিল খুব বেশি।’ ১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিফেন্স স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অল গিলওয়েল স্কাউট আন্দোলনের সূচনা করেন। ১৯৪৮ সালে সলিমুল্লাহ ফাহমির নেতৃত্বে আমাদের দেশে স্কাউটিংয়ের যাত্রা। সেপ্টেম্বর, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি সরকারি স্বীকৃতি পেলে বিশ্ব স্কাউট সংস্থা (ডঙঝগ) ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। স্কাউটিংয়ের মূল লক্ষ্য শিশু-কিশোরদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলি উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এ জন্যই বাংলাদেশ স্কাউটের আনুষ্ঠানিক দীক্ষার ভাষা হলো : আমি আমার আত্মমর্যাদার ওপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে, * আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, সর্বদা অন্যকে সাহায্য করতে, স্কাউট আইন মেনে চলতে, আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। সদস্য হলেই বা শপথ নিলেই কেউ স্কাউট হয়ে যায় না। বরং এ জন্য থাকতে হয় একাত্মতা। একজন স্কাউট এগিয়ে যায় সবার সাহায্যে। কোনো কিছু প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নয়, মানবতার টানে। যেকোনো বিপদে বিচলিত না হয়ে ধীরে-সুস্থে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় স্কাউটিংয়ে। স্কাউটিং নেতৃত্বদানে করে তোলে পারদর্শী। ফলে নতুন করে কোনো কিছুই বুঝে নিতে হয় না, জীবনের সব কাজেই সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে স্কাউট সদস্য। স্কাউটের চেতনায় জীবনের সব ক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবেলার উপায় ঐকমত্য- এ বিষয়ে ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য পবিত্র কোরআনে ‘সিসা ঢালা প্রাচীর’ বলা হয়েছে। হাদিসে এ চেতনাকেই ‘এক দেহ’, ‘এক সৌধ’, ‘একই আদমের সন্তান’তুল্য বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (বিধান ও রহমত) দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ করো, তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যেয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩) কেননা অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা পরিহার করাই ইসলামের শিক্ষা। পবিত্র চিন্তা ও পারলৌকিক চেতনায় স্কাউটিংও হতে পারে ইবাদত।