বরিশাল
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে ডোপ টেস্ট, মাদকে জড়িত ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত এমন ১৭ সদস্য মাদক সেবনের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ডোপ টেস্টে পুলিশ সদস্যদের শরীরে মাদকের অস্থিত্ব পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) থেকে কনস্টেবল মর্যাদার ৫ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করাসহ আরও চারজনকে চাকরিচ্যুৎ করেছে উচ্চ পুলিশ প্রশাসন। এখন আরও অন্তত ১০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন- বিতর্ক এবং স্বচ্ছতা পুনরুদ্ধারে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান নিজেই প্রতিটি সদস্যকে ডোপ টেস্ট করানোর উদ্যোগ নেন। সাম্প্রতিকালে বরিশালে মাদকসহ বেশ কয়েকজন মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের সদস্য আটক হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইমেজ সংকট দেখা দেয়। প্রশাসন যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স অবস্থান নিয়েছে, সেখানে তাদেরই সদস্যরা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি একেবারে বেমানান।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়- পরিস্থিতির আলোকে পুলিশ কমিশনার ডোপ টেস্টের উদ্যোগ গ্রহণপূর্বক পুলিশ হেডকোয়াটার্সকে বিষয়টি অবহিত করেন। প্রাথমিক ভাবে কারা মাদক গ্রহণ করতে পারে সম্ভাব্য এ ধরনের পুলিশ সদস্যদের গোপনে চিহ্নিত করে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। পুলিশ কমিশনার কার্যালয় বিশেষ ব্যবস্থায় সন্দিগ্ধ পুলিশ সদস্যদের ধারাবাহিক এ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান ডোপ টেস্টের চালুর কথা নিশ্চিত করলেও হেডকোয়াটার্সের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি জানান, পুলিশ বাহিনীতে স্বচ্ছতা ধরে রাখতে ইতিবাচক যেকোন উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে নেওয়া যেতে পারে। তারই আলোকে ডোপ টেস্ট চালু করে পুলিশ সদস্যদের এক ধরনের সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত কতজন পুলিশ সদস্য ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে তার সংখ্যা কত এমন প্রশ্নে শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। তিনি স্বীকার করেছেন বেশ কয়েকজন মাদকাসক্ত হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার তাদের নজরদারির মাঝে রাখা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়- গত ১৫ মাসে ৪৮ জন সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্টে ১৭ জনের রিপোর্ট পজেটিভ হয়। এদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এএসআই পর্যায়ের ৪ জন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুৎ করা হয়েছে। এছাড়া মাদক বিক্রিতে জড়িত থাকায় মামলা দিয়ে ৫ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে কারগারে। মাদকাসক্ত সদস্যদের ধরতে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়েছে। ইউনিট প্রধানরা কাউকে সন্দেহ করলে তারা গোপনে কমিশনার কার্যালয়ে মাদকাসক্ত কিংবা মাদক কারবারী পুলিশের তালিকা প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের কৌশলে ডেকে এনে ডোপ টেস্ট করা হয়। যাদের রিপোর্ট পজেটিভ হয় তাদের কিছুদিন পর আবার ডোপ টেস্ট হয়। চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে তৃতীয়বারের মতো করা হয় ডোপ টেস্ট। ডোপ টেস্টে কারোর রিপোর্ট পজেটিভ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে করা হচ্ছে চাকরিচ্যুৎ।
ওই সূত্রটির ভাষ্যমতে- প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পুলিশ সদস্যকে ডোপ টেস্টের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। আবার কোন কোন পুলিশ সদস্য একবার নয়, একাধিকবার টেস্টের মুখোমুখি হয়েছে। সেখানেই বিপত্তি। পুলিশ সদস্যদের আপত্তি বারবার টেস্টের মুখোমুখি হওয়ার পরিবার পরিজনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে মাদকাসক্ত প্রসঙ্গে। বিব্রতকর এই পরিস্থিতিতে তারা মুখ খুলতেও পারছেন না স্বচ্ছতার নিরিকে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে। পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে স্বল্প পরিসরের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা থাকলেও পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষার জন্য বাইরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সেই রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হয়।
অপর একটি সূত্র বলছে- দাখিল করা রিপোর্ট সন্তোসজনক না হলেই পুনরায় তাদেরকে ডোপ টেস্টের মুখোমুখি হতে হয়। আবার সন্দেহের তালিকায় থাকা পুলিশ সদস্যদের একাধিকবার ডোপ টেস্ট করে রিপোর্ট নিশ্চিতের পরেই পরিত্রাণ মেলে। এনিয়ে পুলিশ প্রশাসনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও অনেকেই স্বচ্ছ থাকতে স্বউদ্যোগেই ডোপ টেস্টে আগ্রহী হচ্ছেন।
একজনের একাধিকবার ডোপ টেস্ট প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন- স্বচ্ছতার তাগিদে এমনটি করা বেমানান কোথায়। প্রয়োজন থাকলে পর্যায়ক্রমে সবাইকেই এই পরীক্ষার আওতায় আনা হলেও বিতর্কের কিছু নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- অত্যান্ত কঠোর মানসিকতার অধিকারী পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বরিশালে যোগদানের পরেই মেট্রোপলিটন পুলিশের চেহারা পাল্টে যায়। ফিরে আসে চেইন অব কমান্ড। এরই মাঝে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগ উঠলে তিনি এই ডোপ টেস্ট চালু করেন। যার ইতিবাচক ফল হিসেবে মাদকের সাথে জড়িত অনেক পুলিশ সদস্য চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে নেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অভিমত মাঠ পুলিশের ভেতর থেকেই পাওয়া গেছে।’