লিড
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন সঙ্কট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ নাজুক পরিবহন ব্যবস্থা এবং কাগজে কলমে ফিটনেস থাকলেও বাস্তবে ভিন্ন দৃষ্টিনন্দন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বাসগুলো।
চালকের স্বল্পতায় ইচ্ছে হলেই রাতারাতি সমাধানও করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের সহকারী রেজিষ্ট্রারের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য বড় বাস রয়েছে ৪ টি, মিনিবাস ৪টি এবং শিক্ষকদের জন্য রয়েছে হাতগোনা কিছু এসি ও নন এসি মাইক্রোবাস যা দিয়ে চলে প্রতিদিনের পরিবহন কার্যক্রম।
এছাড়া পরিবহনের ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) থেকে চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতল বাস ও বড় বাস প্রয়োজনমতো নিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে ১ টি পদে চালক নিয়োগের কথা রয়েছে।
পরিবহন পুলের তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থী অনুপাতে বাস সংখ্যা পর্যাপ্ত হলেও শিক্ষার্থী ও চালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানান, দিনের শেষের দিকের ট্রিপগুলোতে গাড়ি ওভারলোড হয়ে যায় ফলে গাড়ি চালাতেও বেশ ভোগ পোহাতে হয় আমাগো। ২৮ সিটের মিনিবাসে যখন ৫৬ থেকে ৫৮ জন উঠে তখন অনেক সতর্ক হয়ে ড্রাইভিং করতে হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিক আবদুল্লাহ বলেন, ২০টি বাসের বিপরীতে ৮-৯ হাজার শিক্ষার্থী কোনভাবেই পর্যাপ্ত না। আবার শিক্ষক-কর্মকর্তারাও সেবা পাচ্ছে এই ২০ টি বাসের অন্তর্ভুক্ত বাস দিয়েই।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. কাজী ইসমাঈল বলেন, অনেক ক্ষোভ ঝাড়া হইছে, কিন্তু দিনশেষে শিক্ষার্থীদের কপালই পোড়া, এক একটা লক্কর ঝক্কর বাস শুধু আমতলা থেকে যেতে ২৫ মিনিট লাগে, শিক্ষার্থীদের সময়ের তো কোন মূল্য নেই।
কর্মকর্তারা ভালো বাসে উঠুক সমস্যা নেই, তাহলে শিক্ষার্থীরা দোষ করলো কোথায়? এত এত কিছু হলো অথচ বাসের ফিটনেস এরা ঠিক করবেই না।
এছাড়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অভি বলেন, বিআরটিসি ৫, ৬ নং বাসগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। আর বিকাল ৫:১০ এর সময় এই দুইটা বাসের সাথে আর একটা বাস যদি দেওয়া যায় তাহলে আর হয়তো কাউকে গেটে ঝুলে ঝুলে যাওয়া লাগবে না, অনেক সময় রুপাতলি থেকে এই বাস গুলোতে উঠার জায়গাও থাকে না।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা জানান, বরিশাল নগরীর রূপাতলী ও কাঁঠালতলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে বাসে সিট পাওয়া তো দূরের কথা, দাঁড়িয়ে যাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বাস পুরাতন হওয়ায় সেগুলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়, বিষয়টি শিক্ষার্থীরাও জানেন না ফলে মাঝে মধ্যে গাড়ির আশায় চাতক পাখির মতো দাড়িয়ে থেকেও পাওয়া যায় না কাক্সিক্ষত বাসের দেখা।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের ফোরম্যান বলেন, শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
কিন্তু পরিবহন ও চালক সংকটের কারণে আমরা একটি গাড়ির সমস্যা হলে সেটির ব্যাক-আপ সার্ভিস দিতে পারছি না।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিবহনের কাজে নিয়োজিত বড় বাস ‘ধানসিঁড়ি’ দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও সেটি মেরামতে দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি।
তবে এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের সহকারী রেজিস্ট্রার সুব্রত বাড়ৈ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে আমাদের প্রতিবছর গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ লক্ষ টাকা বাজেট দেয়া হয়।
কিন্তু ‘ধানসিঁড়ি’ বাসের অবস্থা একটু বেশি খারাপ হওয়ায় এটি মেরামতের জন্য অনেক বেশি টাকা প্রয়োজন যেটি আমরা অলরেডি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসিকে জানিয়েছি। আশা করি বাজেট অনুমোদন হলে দ্রুতই বাসটি মেরামত করতে পারবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস মাঝপথে নষ্ট হয় এটি খুব রেয়ার।
তবে এটা ঠিক যে বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় ব্যাক-আপ সার্ভিস দিতে পারছি না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো খরচ করতে হলে সেটি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই করতে হয়।
ফলে আমাদের খরচের একটি ফাইল বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে অনুমোদন পেলে এরপরেই আমরা কাজ করতে পারি। তবে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে গাড়িগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে আমরা অনেক সময় প্রক্রিয়া ফলো করি না।
তিনি আরো জানান, প্রতি বছর ৩ কোটি টাকা পরিবহনে বাজেট থাকে যেটি দিয়ে আমরা নতুন পরিবহন ক্রয় করে থাকি। তবে করোনার কারণে আমাদেরকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছিলো টাকাগুলো খরচ করা যাবে না তাই আমরা খরচ করতে পারিনি।
ঐ টাকা খরচ করতে পারলে আমরা আগেই ৩-৪ টি পরিবহন ক্রয় করতে পারতাম। তবে বাস্তব সত্য যে, শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে কিছু জানায়নি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, চলতি মাসেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে আরো ২ টি নিজস্ব বাস যুক্ত হবে। এর ফলে আশাকরি পরিবহন সমস্যা কমে আসবে।