বরিশাল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল!
নিজস্ব প্রতিবেদক : মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক। গত এক সপ্তাহে সড়কটির বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের অংশে ৬টি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
এ নিয়ে নানা সমালোচনা-প্রতিবাদ হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সড়ক বিভাগ। এমনকি, প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ এলাকাবাসীর। তবে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্মম মৃত্যু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী মাইসা ফৌজিয়া মিমের। গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই বাসচাপায় প্রাণ হারান তিনি।
এ ঘটনার ৪ দিন পরই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সিফাত নামে ১৩ বছরের শিশুর। এর পরদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে আবারও বাসচাপায় প্রাণ যায় মোটরসাইকেল আরোহী শিক্ষক ইউনুস আলীর।
ঢাকা থেকে বরিশাল শহর হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের এ সড়ক দিয়ে যাওয়া হয় পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-ভোলা। তবে এ সড়কটিতে এত দুর্ঘটনা বেড়েছে যে, যেন মৃত্যু ফাঁদ তৈরি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ছয়টি দুর্ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ আহত কমপক্ষে ১৫ জন।
স্থানীয়রা জানান, দুই লেনের সড়কে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহতের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয় পুরো শহর। দুর্ঘটনা কমাতে গতিরোধক নির্মাণ, পর্যাপ্ত সড়ক বাতি স্থাপন, ফুট ওভারব্রিজ, ফুটপাত নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কটির বাইপাস নির্মাণে বিভিন্ন দফতরে জোর দাবি জানানো হয়েছে। আমিনুর নামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনকে হারিয়েছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা বেশ কিছু দাবি তুলেছি। দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে আশা করছি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। সড়কে আর কোনো প্রাণ ঝরবে না।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে কথা বলা হয়েছে। সড়ক বাতি নিশ্চিতের পাশাপাশি সড়কে গতিরোধক নির্মাণ, ফুটপাত নির্মাণ ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এ বিষয়ে কাজ করবে।’
এতদিনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলেও এবার সংকট সমাধানের আশ্বাস সংশ্লিষ্ট বিভাগের। বরিশাল মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনা রোধে এরইমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কে।’
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ফুটপাত নির্মাণ ও গতিরোধক নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আশা করছি দ্রুত কাজগুলো সমাপ্ত করা যাবে।’
২০১৯ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে বেপরোয়া কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহত হন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। তখন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা উদ্যোগের কথা থাকলেও হয়নি তার কোনোটাই।