বরিশাল
বরিশালে স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়াই কাল হলো সোলায়মানের!
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়ায় চারটি মামলার আসামী হয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুড়ছেন স্বামী মোঃ সোলায়মান হাওলাদার। তার জমানো ১৩ লাখ টাকা পরকীয়া প্রেমিকের হাতে তুলে দিয়েছেন স্ত্রী তানিয়া আক্তার। এদিকে স্ত্রীকে ফিরে পেতে ও মামলা চালাতে গিয়ে হারিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি এনজিওর চাকরি। অন্যদিকে পরকীয়া প্রেমিককে বাঁচাতে ও তার সাথে থাকার জন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে সোলায়মানকে হয়রানি করছে তানিয়া আক্তার ও পরকীয়া প্রেমিক আতিকুর রহমান খান।
জানা গেছে- ২০০৭ সালের জুন মাসে পারিবারিক ভাবে বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভূতুরদিয়া গ্রামের মোঃ সেকান্দার হাওলাদারের ছেলে মোঃ সোলায়মান হাওলাদারের সাথে একই উপজেলার রাকুদিয়ার গ্রামের আশ্রাফ আলী সরদারের মেয়ে তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ে পর থেকে ভালই চলছিল তাদের সংসার। তানিয়াকে নিজের সংসারে রেখে পড়াশুনা করিয়ে ১৯ নং দক্ষিণ ভূতেরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন স্বামী সোলায়মান। তাদের ১৪ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। হঠাৎ আগরপুর গ্রামের মৃত মনিরুজ্জামান খান ওরফে কবির খানের ছেলে ও বাহেরচর মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফপিআই আতিকুর রহমান খানের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তানিয়া আক্তার। গত ২৩ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে তানিয়া স্কুলে যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে আতিকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় নগদ টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রেমিক আতিকের সঙ্গে চলে গেছেন তানিয়া। এরপর থেকে তানিয়াকে ফিরে পেতে বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাপ শুরু করেন সোলায়মান। কিন্তু কিছুতেই ফিরতে রাজি হননি তানিয়া। এক পর্যায়ে তানিয়া সোলায়মানকে কল করে বলেন- বাচ্চার দিকে খেয়াল রেখো, আমি আর ফিরবো না, আমাকে তুমি আর ফিরে পাবে না, আমি আতিকের সাথে থাকবো। নিরুপায় হয়ে তানিয়াকে ফিরে পেতে সোলায়মান বাবুগঞ্জ থানা একটি সাধারন ডায়েরি করেন। যার নং- ৯৪৬ (তাং- ২৪-৩-২০২৪ ইং)। বিষয়টি তানিয়ার মা-বাবা ও আত্মীয়দের জানালে তারা তানিয়াকে ফেরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সোলায়মানকে মামলা করার পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী গত ২৮ মার্চ মোকাম বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে তানিয়া ও আতিকুর রহমানকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যা নং- (সিআর ১০৯/২০২৪)।
মামলা সূত্রে জানা যায়- মামলার ১ নং আসামী তানিয়া আক্তার বাদী সোলায়মানের স্ত্রী। বিগত প্রায় ১৭ বছর পূর্বে সোলায়মান ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক তাকে বিবাহ করে। তাদের দাম্পত্য জীবনে ১ নং সাক্ষী আবদুল্লাহ আল আজমির জন্ম গ্রহন করে। সোলায়মান চট্টগ্রামে একটি কোম্পানীতে চাকুরি করতেন। তানিয়া আক্তার দক্ষিন ভূতেরদিয়া সরকারি প্রাথলিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২ নং আসামী আতিকুর রহমানের সাথে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে তানিয়াকে সংশোধন করার জন্য পারিবারিকভাবে একাধিকবার চেষ্টা করে এবং তার পরকীয়া প্রেমিক আতিককে সতর্ক ও নিষেধ করেন সোলায়মান। এরপরেও তানিয়া সোলায়মানের ঘরে রাখা জমানো ১৩ লক্ষ টাকা কাউকে না জানিয়ে বিভিন্ন তারিখে আতিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠান। লেন-দেন পরকীয়ার বিষয়ে আতিক সংশোধন না হয়ে বিভিন্ন সময় সোলায়মানকে হুমকি-ধমকি প্রদান করেন। এছাড়াও তানিয়া ঘড় ছেড়ে আতিকের সাথে যাবে বলে তার ছেলে আজমিরকে বিভিন্ন সময় ভয়-ভীতি দেখাইতো। সোলায়মানের বোন খাদিজা বেগম দীর্ঘ বছর প্রবাসে (ওমানে) থাকলেও কিছুদিন আগে বাড়ীতে বেড়াতে আসে। সোলায়মান বিগত ২২ মার্চ রাত ৮ টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে আসেন। তিনি বাড়িতে এসে বিল্ডিং ঘর উত্তোলনের জন্য জমানো ১০ লক্ষ টাকা ও প্রবাসী বোনের কাছ থেকে ধার হিসেবে নেওয়া নগদ ১০ লক্ষ টাকা মোট ২০ লক্ষ টাকা ঘরের আলমারির মধ্যে রেখে তানিয়ার সাথে বিল্ডিং নির্মাণ ও নির্মাণ সামগ্রী কেনাকাটার বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন।
অতঃপর ঘটনার দিন বিগত ২৩ মার্চ সকাল ৯ টার দিকে সোলায়মান বাড়ি থেকে বের হয়ে বাবুগঞ্জ বাজারে যান। বাজার থেকে ফিরে সোলায়মান তানিয়াকে বাড়িতে দেখতে না পেয়ে তানিয়াকে বার বার কল করলেও রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে দুপুর ১ টার দিকে তানিয়া সোলায়মানকে কল করে বলে যে, ‘সে আমার সাথে ঘর সংসার করবে না এবং আতিকের সাথে ঘরের যাবতীয় জিনিস নিয়া ঢাকায় চলে যাচ্ছে’। তখন তাৎক্ষনিকভাবে সোলায়মান ঘরের আলমারী খুলে দেখেন আলমারীর মধ্যে রাখা ঘর উত্তোলনের জন্য জমানো ২০ লক্ষ টাকা এবং তানিয়ার ব্যবহৃত ৪ ভরি স্বর্নালংকার এবং মূল্যবান ডকুমেন্টস আলমারীতে নেই। তানিয়া ও আতিক পরস্পরের যোগসাজসে টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান ডকুমেন্টস চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়াও তানিয়ার নামীয় সোনালী ব্যাংক পিএলসি, খানপুরা শাখায় ০৩২১১১০০৯৭০২৮ নং হিসাবে জমাকৃত ১৮ লক্ষ টাকার মধ্যে সোলায়মানের দেওয়া জমানো ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরপর সোলায়মান ও তার আত্মীয়-স্বজনরা তানিয়ার অবস্থান জানার জন্য তল্লাশী শুরু করে না পেয়ে বিগত ২৪ মার্চ বাবুগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন। (যার নং- ৯৪৬) তল্লাশী চলাকালীন বিভিন্ন সময় আতিক তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে কল করে সোলায়মানকে বলেন, ‘তোর বউয়ের সাথে আমি ফ্লিম্নি স্টাইলে অবৈধ যৌন সহবাস করেছি এবং আরো করবো, তোর বউ এখন তোর তত্বাবধায়ন থেকে আমার তত্বাবধায়নে আছে, ক্ষমতা থাকলে তোর বউকে নিয়া যা, তুই আমাদের খোঁজ করতে আসলে তোকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে মাছকে খাওয়াবো।
এ মামলাটি দায়েরের পর নিজেদের রক্ষার্থে সোলায়মানের বিরুদ্ধে পর পর ৪ মামলা দায়ের করেন তানিয়া ও আতিক। এ মধ্যে তানিয়া সোলায়মানকে অভিযুক্ত করে যৌতুক, নির্যাতন ও জালজালিয়াতির অভিযোগ এনে তিনটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তানিয়া সরকারি চাকুরীজীবী হয়েও তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই ৩ টি মামলা দায়ের করেছেন। আবার তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটির তথ্য গোপন করায় বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে তানিয়ার কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রোমাঞ্চ আহমেদ। তানিয়ার কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রমাণাদিও সংযুক্ত করে পাঠানো হয় লিখিত অভিযোগের সাথে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আকতারুজ্জামান বলেন- অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অন্যদিকে সোলায়মানকে ফাঁসাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন আতিকুর রহমান। এদিকে আতিক-তানিয়ার পরকীয়া প্রেমের কাহিনী শুনে নিমিষেই খেই হারান আতিকের স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম নাদিরা। কারণ তাদের সংসারে ৪ টি পুত্র সন্তান রয়েছে। নিজের সংসার টিকাতে আতিকের পরকীয়ায় বাঁধা দেন নাদিরা। তবে নাদিরার কথায় কর্নপাত না করে তাকে পিটিয়ে বাড়িতে থেকে বের করে দেন আতিক। নিরুপায় হয়ে আদালতের দারস্থ হন নাদিরা। আতিক-তানিয়াকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আতিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
ভুক্তভোগী সোলায়মান বলেন- আমি বিয়ের পর থেকে তানিয়ে পড়াশুনা করিয়ে চাকুরী পেতে সহায়তা করেছি। আমরা ১৭ বছর সংসার করেছি, আমাদের ১৪ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। কিন্তু এ সব কথা না ভেবে আমার জামানো টাকা-পয়সা নিয়ে সে লম্পট আতিকের সাথে পালিয়েছে। আমি অনেকবার তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি, সে ফিরবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আমি কখনো তার গায়ে হাত তুলিনি, সে আমাকে ফাঁসাতে নির্যাতনসহ তিনটি মামলা দিয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আতিক-তানিয়ার বিচার চাই।