বরিশাল
বরিশালে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না এলপিজি গ্যাস
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে এলপিজি সিলিন্ডার প্রতি কয়েকশ টাকা বেশি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত মূল্যে সিলিন্ডার তো পাওয়া যাচ্ছেই না, কোথাও কোথাও কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহও। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট খুচরা বিক্রেতা বলছেন তাঁর কাছে গ্যাসই নেই। গ্রাহকরা বলছেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা অসৎ প্রক্রিয়ায় সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
নগরীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রূপাতলীর বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে যখন সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৩২ টাকা ছিল তখনও সেটি কিনতে হয়েছে ১৫শ টাকার বেশিতে। সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধির পর এখন তাঁরা ১৮০০ টাকা নিচ্ছে। যা রীতিমতো ডাকাতি। জানা গেছে, ১২ কেজি, ৩০ কেজি, ৪৫ কেজিসহ বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হয়। বাসাবাড়িতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ১২ কেজির সিলিন্ডার। ৩০-৪৫ কেজির সিলিন্ডার হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
গত ২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একসঙ্গে আড়াইশ টাকার বেশি দাম বাড়ানোয় এমনিতেই ক্রেতাদের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তারওপর এখন সরকার নির্ধারিত দামেও গ্যাস পাচ্ছেন না ক্রেতারা। ১৪৯৮ টাকার গ্যাস খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০০ টাকা। কোথাও কোথাও আরও বেশি। অর্থাৎ ৩শ টাকারও বেশি নেওয়া হচ্ছে ১২ কেজির সিলিন্ডারে।
মো. শহীদ নামে বটতলা এলাকার বাসিন্দা বলেন, সরকারি দামে এলপিজি সিলিন্ডার কখনোই বিক্রি হয়নি। সবসময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামেই কিনতে হয়েছে। কিন্ত এবার সেটা ‘অতিরিক্তভাবে বেশি’ দামে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের তো কোনো উপায় নেই, বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে। সরকারকে এটা অবশ্যই দেখা উচিত। সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায়ী রূপাতলীর শহীদ বলেন, আমরা ইচ্ছে করে দাম বেশি রাখছি না। কোম্পানির লোকদের কাছ থেকে আমাদের কেনা পড়ছে বেশি দামে। আমরা তো লস দিয়ে বিক্রি করতে পারি না।
আরেক ব্যবসায়ী বশির বলেন, কোম্পানি রেটই তো বেশি। আমাদের যদি বেশি কেনা পড়ে, তাহলে সরকারি দামে বিক্রি করার তো কোনো সুযোগ নেই। আবার দাম বাড়ার পর সাপ্লাই কিছুটা কমে গেছে। অনেক এলাকাতে সিলিন্ডার পাওয়াও যাচ্ছে না। এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি কেন এমন প্রশ্ন করা হয় লাফস এলপিজি সিলিন্ডারের সাব ডিলার আরিফিন শাওন বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে পাইকারি মূল্য নিচ্ছেন ১৫২০ টাকা। আমরা বাজারে ১৫৫০ টাকা পাইকারি দিচ্ছি। সেখানে খুচরা দোকানিরা ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা দাম নিতে পারে। কিন্তু অধিক মুল্য দাম নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে কথা হয় ফ্রেস গ্যাসের ফিল্ড অফিসার মো. খায়রুল খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য বেশি রাখাটা যে শুধু কোম্পানির দোষ, ব্যাপারটা তা নয়। আমরা মূলত ৩৫- ৪৫ কেজির সিলিন্ডার হোটেল-রেস্টুরেন্টে দিয়ে থাকি। ৩৫ কেজি গ্যাস ৪২৫০ টাকা ও ৪৫ কেজির গ্যাস ৫৪০০ টাকা দাম নেই। সেক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়িরা গ্যাস প্রতি কত টাকা নিচ্ছেন তা আমাদের জানা নেই।
নাম প্রকাশ শর্তে এক খুচরা গ্যাস বিক্রেতা বলেন, যখন ডিলাররা দেখে যে এ মাসে প্রোডাক্ট কম আসছে কোম্পানি থেকে, তখন তারা টার্গেট পূরণের জন্য বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করে। আপনি তাদের কাছে সঠিক মূল্যের হিসাব পাবেন না। আবার দোকানি যখন দেখছে সাপ্লাই কম, তারাও তখন মজুত করে দাম বাড়িয়ে ফেলে। সুতরাং সমস্যাটা সামগ্রিকভাবে তৈরি হয়। কোম্পানি যে দামে সেল করতে চায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে গিয়ে তার দাম বেড়ে যায়। আমরা সবসময় চেষ্টা করি নির্ধারিত মূল্যেই গ্যাস বিক্রি করতে। এখন প্রশাসন কঠোর হলে বা তদারকি বাড়ালে অন্তত ‘অতিরিক্ত বেশি’ মূল্যে বিক্রি হওয়াটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলেন তিনি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহ শোয়াইব মিয়া বলেন, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যদি কোথাও অতিরিক্ত মূল্য রাখা হয়, গ্রাহকরা যদি অভিযোগ করেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।