বরিশাল
বরিশালে মাটিখেকোদের আতঙ্ক – সদর এ্যাসিল্যান্ড ভ্রাম্যমান আদালতে জাহাজ জব্দ ! আটক ২
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের টুমচর ভেদুরিয়া গ্রামের নদীর ওপাড়ের চর পাওয়ার চরের মাটি অবৈধভাবে কেটে নেওয়ার অভিযোগে দুই শ্রমিক’কে কারাদণ্ড এবং দুটি জাহাজ জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল (শনিবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। দণ্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন, আফসু মিয়া (৩০) এবং কুদ্দুস মিয়া (৩২)। দণ্ড ঘোষণার পরপরই তাদের বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সুব্রত কুমার বিশ্বাস জানান, চর পাওয়ার চরের মাটি অবৈধভাবে কেটে নেওয়ার খবর পেয়ে বরিশাল র্যাব-৮ এর সহযোগিতায় সেখানে অভিযান চালায় সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান টের পেয়ে অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও ওই দুজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় মনুষ্যবিহীন দুটি জাহাজ জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক দুই শ্রমিককে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।
সম্প্রতি বরিশাল জেলার খরস্রোতা খ্যাত কালাবদর নদী থেকে অবাধে মাটি চুরি হচ্ছিল। নদীর ভেতর থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নেয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নদী পারের ফসলি জমি। নদীর বুকে ভেকু বসিয়ে প্রভাবশালীরা অবাধে কেটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাটি। প্রতিটি জাহাজ ভর্তী করে মাটি নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে তারা বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের আওতাধীন চর পাওয়ার চর থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনকারীরা স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নদীতে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করে আসছে। ক্রমাগত মাটি কাটার ফলে ফসলি জমি ও নদীগর্ভ হুমকির মুখে পড়ছে। চন্দ্রমোহন গ্রামের মাছুদুর রহমান অভিযোগ করে প্রতিবেদকদের বলেন, একটি চক্র ক্ষমতার দাপট এবং লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দিনে-রাতে মাটি চুরি করে নিচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধের জন্য তাদের অনুরোধ করা হলে উল্টো তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হবে বলে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি বছর শীত আসার পর পরই জেলার মেহেন্দিগঞ্জ ও সদরের কালাবদর নদী পারের চর থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকোরা। প্রতিদিন মাটি কেটে জাহাজ ভর্তী করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ বিভীন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি চক্র এই নদীর গতিপথসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী চক্রটি পুলিশ ও ভূমি অফিসের এক শ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজস করে দীর্ঘদিন ধরে মাটি চুরির জমজমাট ব্যবসা চালিয়েছিল। তবে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী মাটি চোরদের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানান। সংঘবদ্ধ চক্র মাটি কাটার জন্য বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবৎ চরের মাটি নিয়ে যাচ্ছিলো।
চর পাওয়ার চরের মাটি কাটা সিন্ডকেটের সাথে জরিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আঃ গনি হাওলাদারের পুত্র আঃ খালেক, লেঙ্গুটিয়া গ্রামের শাহিন চৌকিদার, চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের সুলতান খাঁন, কালাম হাওলাদার, কবির ঢালি, রহমান মেম্বরসহ আরও অনেকে।
মুঠোফোনে কালাম হাওলাদারকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি ক্রয় করে তা খালেক ভাই’র কাছে বিক্রি করেছি, আমি তাদের সাথে জরিত নেই। খালেক হাওলাদার বলেন, আমি একা নই চর পাওয়ার চর থেকে চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি জাকির মাঝিরও ৩টি মাটি কাটার ভ্যেকু আছে। যাতে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক লোক মাটি কাটছিলো। মেহেন্দিগঞ্জের শাহিন চৌকিদার চন্দ্রমোহন ইউপি চেয়ারম্যান আঃ আজিজ মাষ্টারের ভাগনী জামাই সুলতানের সেল্টারে মাটি কাটতেছে। গতোকাল ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জাহাজ জব্দ ও ২ জনকে আটক করায় চন্দ্রমোহন এলাকায় সস্তি ফিরেছে।