বরিশাল
বরিশালে বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’র প্রভাবে বরিশাল বিভাগের ৯টি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে দুপুর ৩টা নাগাদ পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে গভীর নিম্নচাপটি। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে বরিশাল-খুলনার উপকূলে আঘাত হানবে। তবে বরিশালের উপকূলে এখনো বড় কোনো প্রভাব পড়েনি ঘূর্ণিঝড়ের। উল্টো দিনে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন।
বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ১২টার দিকে ১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এখনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তবে রাতে আবহাওয়া পরিবর্তন হতে পারে। নিম্নচাপটির গতিবেগ অনুসারে এটি আরও উত্তরে সরে আসবে।
বশির আহমেদ বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নদী বন্দরকে ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি নদীর পানির উচ্চতা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রতিটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে তা এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। এরমধ্যে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তজুমদ্দিনের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ভোলার তেতুলিয়া নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী ১২ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বেড়েছে ৯ সেন্টিমিটার।
শনিবার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (ক্রমিক নম্বর-৭) এ বলা হয়েছে, সন্ধ্যা থেকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে পড়তে শুরু করবে। মধ্যরাত থেকেই পুরোপুরি প্রভাব শুরু হতে পারে। নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। তবে উপকূলের আকাশে কোনো মেঘ বৃষ্টি নেই।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলায় রেমাল মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা সমূহের সব সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধ করন ওষুধ, মোমবাতি, ম্যাচ, খাবার স্যালাইন, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ, আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত বহুতল ভবন, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। জেলার সব স্থানে মাইকিং ও আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য প্রচার করতে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত গোখাদ্যের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয় সভা করা হয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি আমরা দক্ষতার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে পারব।