বরিশাল
বরিশালে পন্টুনের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের কলাম-দেয়াল
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঘাট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বিশালাকৃতির পন্টুনের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন। এতে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংস্কারের দ্রুত উদ্যোগ না নিলে গোটা ভবনটিই হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাইছেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্কুলের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উলানিয়া কালিগঞ্জ লঞ্চঘাটের বিশালাকৃতির লোহার পন্টুনটি ছুটে যায়। সেটি নদী তীরবর্তী উলানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনে এসে আঘাত করে। এতে ভবনের ওই অংশের দেয়ালসহ দুটি কলম ভেঙে যায়। ভাঙা কলম দুটির মধ্যে একটির রড বেঁকে গেছে, আর একটির রড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ- ঘাটের সঙ্গে পন্টুনটিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) লোকজন ঠিকভাবে আটকাতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা বারবার সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে আসছি। কিন্তু তারা এতে কোনো পাত্তা না দেওয়ায় পন্টুনটি ঘাট থেকে আলাদা হয়ে বিদ্যালয় ভবনে আঘাত করেছে। এর ক্ষতিপূরণ বিআইডব্লিউটিএ’র দেওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ কিছু বলতে রাজি নন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ জানান, ১৯৭২ সালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী উলানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে সাড়ে ৪০০ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠদান করানো হয়। বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবন রয়েছে, হলরুমেরও ভবন রয়েছে। তবে একমাত্র দোতলা পাকা ভবনটিতে সব থেকে বেশি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানার পর মেঘনা নদীর পানি যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি এ অঞ্চলে বিরূপ আবহওয়াও বিরাজ করছিল। ওইসময় উলানিয়া কালিগঞ্জ লঞ্চঘাটের বিশালাকৃতির লোহার পন্টুনটি ঘাট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্কুলের পাকা ভবনটিতে আঘাত করে। এতে ভবনের দুটি কলমসহ নিচতলার দেয়াল ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগকে জানানো হয়েছে।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদকেও বিষয়টি জানানো হয়। তিনি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, দ্রুত বরাদ্দের মাধ্যমে ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে।
তবে দ্রুত সংস্কার করা না হলে আয়তক্ষেত্র ভবনটির ওপরের অংশে ফাটল দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন একটি বেসরকারি কোম্পানির সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, ভবনটি আয়তক্ষেত্র হওয়ায় তাৎক্ষণিক বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। তবে যেভাবে কলম দুটি ভেঙেছে তাতে ভবনটি ব্যবহার উপযোগী রাখতে দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। আর তা না হলে দোতলার ফ্লোর ও ছাদের অংশে ফাটল দেখা দিতে পারে। আর এতে করে ভবনটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। তখন মেরামত নয়, নতুন নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। আধুনিক প্রকৌশল বিজ্ঞানে ভবনটিকে দুইভাবে অল্প খরচেই মেরামত করা সম্ভব। যা দীর্ঘস্থায়ীও হবে।
ভাঙনের কারণে উলনিয়ার বেশিরভাগ অংশ গ্রাস করে নিয়েছে মেঘনা নদী। উলানিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে অনেক দূরে ছিল মেঘনা নদী। কিন্তু ভাঙনের কারণে নদী খুব কাছে চলে এসেছে। কয়েক বছর আগে ব্লকের কাজ হওয়ায় বিদ্যালয়ের ভবনগুলো এখনও নদীগর্ভে বিলীন হয়নি। কালিগঞ্জ লঞ্চঘাট আরও দূরে ছিল। কিন্তু সেটি নদীগর্ভে চলে গেছে।