বরিশাল
বরিশালে নেতৃত্বে আসছেন নারীরা, বেড়েছে শিক্ষার হারও
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালে এক সময়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে নারীদের তেমন দেখা যেত না। তবে গেল একদশক ধরে প্রায় সব অঙ্গণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন নারীরা।
নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন স্থানীয় নির্বাচন, সভা-সেমিনার ও রাজনৈতিক মিছিলে। চাকরি করছেন সরকারি-বেসরকারি ও এনজিও সংস্থায়। পাশাপাশি বরিশালে বাড়ছে নারী শিক্ষার হার। গত কয়েক বছর ধরে বরিশাল বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ ও জিপিএ-৫ ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
বর্তমান সরকার নারীবান্ধব হওয়ায় নারীর উন্নয়ন ও বিকাশে নিরলস কাজ করায় গত এক দশকে বরিশাল নারী নেতৃত্ব ও শিক্ষার হার কয়েকগুন বাড়ছে বলে মনে করেছেন স্থানীয় নারীনেত্রীরা।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বরিশাল বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পাশের হার ছেলেদের তুলানায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। পাস করা ৬৩ হাজার ৯৬৪ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ৩০ হাজার ২৮৯ জন এবং মেয়ে ৩৩ হাজার ৬৭৫ জন। জিপিএ ৫ পাওয়া ৯ হাজার ৯৭১ জনের মধ্যে ছেলে তিন হাজার ৪৮১ এবং মেয়ে ছয় হাজার ৪৯০ জন রয়েছে।
২০২১ সালের এসএসসি ফলাফলে পাসের হার ৯০ দশমিক ১৯ ভাগের মধ্য মেয়েদের পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ ভাগ ও ছেলেদের পাশের হার ৮৯ দশমিক ১৭ ভাগ।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন বলেন, বরিশাল বোর্ডে গত কয়েক বছর যাবত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ ও জিপিএ-৫ ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
বরিশাল জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডাক্তার মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন,বরিশালে গত এক দশকে নারী নেতৃত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আরো বাড়ত সরকার যদি নারী নেতৃত্ব দেয়ার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করত।
তারপরও নারীরা আজ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। বাসদ সবসময়ই নারী নেতৃত্ব সৃস্টি করার জন্য কাজ করছে। তারই ধারাবাহিতায় নগরীর ১৫ টি ওয়ার্ডে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম গঠন করে নারী নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মনীষা চক্রবর্ত্তী।
এনজিও আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, এক সময় নারীদের সামাজিক,রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন সামাজিক, রাজনৈতিক, উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং বিচার-শালিসেও নারীনেতৃত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয় নিবার্চন থেকে শুরু করে দেশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে নারীরা আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ নারীর উন্নয়ন-বিকাশ ও নারীদের সামনে আনার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
নারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃতির জন্য বঙ্গমাতা, জয়িতা ও বেগম রোকেয়া সহ বিভিন্ন পদক প্রদান চালু করেছে সরকার। তারই ফলে দেশে আজ নারীরা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুযোগ পাচ্ছেন।
গত দশকে তার প্রতিষ্ঠানে ৩৫ ভাগ নারী স্টাফরা কাজ শুরু করলে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ ভাগের উপরে । কেননা নারীর আজ শিক্ষিত ও স্বালম্ববী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর নিগার সুলতানা হনুফা বলেন, ৮০’র দশক থেকে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার চেস্টা করছি।
তখন ২৫/৩০ নারী সহযোদ্ধা থাকলেও ১০/১২ সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি। কিন্তু সেই সময়ে ১০ শতাংশ নারী রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০/৪০ শতাংশের উপরে।
একসময়ে আর্ন্তজাতিক নারী দিবসেও নারীদের উপস্থিতি কম ছিলো। কিন্তু এখন বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুনে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার বদৌলতে আজকের নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে রাজনৈতিক থেকে শুরু করে সকল কর্মকান্ডে পুরুষের পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফারহানা তিথি বলেন, ছাত্র রাজনীতির পর ২০০৩ সাল থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ৩০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ দেখলেও এখন তা বেড়ে প্রায় ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে নারী নেতৃত্ব। তবে পদ অনুযায়ী নারীদের মূল্যায়ন দেয়া হয় না।
বরিশাল মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দিলারা খানম বলেন,বরিশাল জেলায় ৫২ হাজার বেশি নারী রয়েছেন যারা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর বিভিন্ন ভাবে সরকারী সহায়তা পাচ্ছেন।
পাশাপাশি তাদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একদিকে সরকার নারী শিক্ষার ওপর জোড় দিয়েছেন,আরেক দিকে নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।