বরিশাল
বরিশালে নববধূর সঙ্গে অভিমানে শাশুড়ির বিষপান, হাসপাতালে না নেয়ায় মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের মুলাদীতে স্বামী ও স্বজনদের অবহেলায় এক গৃহবধূর মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই গৃহবধূ তার পুত্রবধূর সঙ্গে অভিমান করে বিষপান করার পরও স্বামীসহ স্বজনদের কেউ তাঁকে হাসপাতালে নেয়নি। আজ বুধবার ওই নারীর ভাই তাঁকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ওই গৃহবধূর নাম- পারভীন বেগম (৪০)। তিনি উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মনির আকন ওরফে মরণ আলীর স্ত্রী। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আকন বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। পারভীন বেগম তাঁর পুত্রবধূর সঙ্গে অভিমান করে বিষপান করেছেন বলে দাবি স্বজনদের। তিন-চার মাস আগে তাঁর ছেলের বিয়ে হয়েছে।
নিহত গৃহবধূর ভাই সোহান কাজী জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার রাতে পারভীনের সঙ্গে তাঁর পুত্রবধূর ঝগড়া হয়। স্বামী ও ছেলেরা বিষয়টি মীমাংসা না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন পারভীন। কিন্তু স্বামী ও ছেলেরা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেননি। সকালে সংবাদ পেয়ে তিনি তাঁর বোনকে মুলাদী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুলাদী হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শাহারাজ হোসেন বলেন, ‘রাতেই বিষপান করা গৃহবধূকে বুধবার সকাল পৌনে ৭টায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মৃত ঘোষণার পর বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে স্বজনেরা দ্রুত মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরে পুলিশ পথ থেকে লাশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রাশেদ মাতুব্বর বলেন, ‘রাতে পারভীন বেগম বিষপানের পরে মনির আকন এবং স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি কিংবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। উল্টো এলাকায় প্রচার করেছেন তাঁর স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। বুধবার সকালে পারভীনের ভাই হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিষপানের বিষয়টি জানাজানি হয়। রাতে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল।’
এ বিষয়ে গৃহবধূর স্বামী মনির আকন স্ত্রীর চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, ‘পারভীনের বিষপানের বিষয়টি বুঝতে না পারায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। বুধবার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার ভাইকে সংবাদ দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া জানান, পুত্রবধূর সঙ্গে অভিমান করে পারভীন বেগম বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।