রাজনীতি
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার
এসআই বশির ও এএসআই শরীফ সাময়িক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় কর্মরত দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সোমবার ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান। বরখাস্ত হওয়া দুই পুলিশ সদস্য হলেন এসআই বশির আহমেদ ও এএসআই মো. শরীফ। একের পর এক চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন অভিযোগ এতদিন ঘুরে ফিরছিল। অবশেষে ক্ষমতার অপব্যহারে প্রমাণ মেলায় তাদের বিরুদ্ধে এই প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হল। গত সোমবার রাতে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে এই আদেশ দেয়া হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার মোঃ রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে তারা দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। যা বিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি জানান। সাময়িক বরখাস্ত এসআই বশির আহম্মেদ ও এএসআই শরিফুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে বরিশাল সদর উপজেলার বুখাইনগর গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা মামলায় বশির আহম্মেদ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিহতের স্ত্রী লিজা আক্তারকে ফাঁসিয়ে দিতে জবরদস্তিমূলক স্বীকারোক্তি নেন। তার সাথে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই শরিফুল ইসলাম শরিফ একত্রিত হয়ে লিজাকে আদালতে উপস্থিত করেছিলেন। এই ঘটনাসহ আরও বেশকিছু অভিযোগ ওঠে বশির ও শরিফের বিরুদ্ধে। উলে¬খ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই বেপরোয়া চাঁদাবাজীতে নেমে পড়েন কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। এমনকি বিএমপি‘র এলাকার বাহিরে গিয়ে নদী দাপিয়ে জেলেদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের এন্তার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কর্মহীন মানুষদের হাহাকারও তাদের মন গলাতে পারেনি। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মাছ ব্যবসায়ী, জেলে, মুদি ব্যবসায়ী, পলিথিন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে এমনকি টাকার বিনিময়ে বাল্য বিবাহকেও বৈধ করেছে এরা। এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগকারী জানান, পুলিশের ভয়েই বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। অন্যথায় জীবিকা চালানো দায় হয়ে পড়ে। উপরন্ত নানা অভিযোগে হয়রানী করা হয়। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা কোতয়ালী থানার প্রত্যন্ত এলাকা চরমোনাই ইউনিয়নসহ তার আশপাশ এলাকায় অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের জোন হিসেবে বেছে নিয়েছিল। সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন চরমোনাই ইউনিয়নে দ্বায়িত্বে ছিলেন কোতয়ালী মডেল থানার এএসআই শরীফ। দীর্ঘদিন এক এলাকার দ্বায়িত্ব পালন করায় আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি অবৈধ পন্থায় টাকা উপার্যনের ধান্দা শুরু করেন। সূত্রে আরো জানা যায়, এস আই বশির ও এএসআই শরীফসহ কয়েকজনের একটি টিম গঠিত হয় যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা উত্তোলন। মেহেন্দিগঞ্জ এলাকার চর ভোলানাথের জেলে আবুল বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে বশির স্যার ও শরিফ স্যারসহ ৪ জন ট্রলার নিয়ে এসে আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবী করে। আমি ১০হাজর টাকা দিয়ে রক্ষা পাই।’ নলচর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আল-আমিন গাজী বলেন, ‘গত ২৩ মার্চ কাঠের পোল এলাকা থেকে আমার মাছের ট্রাক আটকিয়ে ১ লক্ষ টাকা দাবী করে এসআই বশির ও এএসআই শরীফ। ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা মাছের ট্রাক ছেড়ে দেয়। এছাড়াও মার্চ মাসে আরো ২ বার মাছ আটকিয়ে ২০ হাজার টাকা নেয় তারা। বুখাইনগর বাজারের ব্যবসায়ী গবিন্দ চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, ‘এপ্রিল মাসে আমার দোকানের গোডাউনে পলিথিন আছে এমন অভিযোগ এনে এসআই বশির, এএসআই শরীফসহ আরো ২ জন আমার নিকট ২ লক্ষ টাকা দাবী করে। প্রথমে তারা আমার মোবাইলটি জব্দ করে। পরে তাদেরকে ২০ হাজার টাকা দিলে আমার মোবাইল ফেরত দেয় এবং আমি রক্ষা পাই। ডিঙ্গামানিক এলাকার দোকানী আবুল কালাম বলেন, ‘লক ডাউনে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দোকান খুলি। দোকানের ঝাপ খোলার অপরাধে এএসআই শরীফসহ ৪ জন আমার দোকানে এসে আমাকে বসিয়ে রেখে আমার ছেলে ও ভাইয়ের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করে। তাদেরকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা পাই। একই এলাকার আরেক দোকানী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সহ অনেকের কাছ থেকে এএসআই শরীফ ও তার সঙ্গীয়রা টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানার এস আই বসির বলেন, আমাকে কি অপরাধে পুলিশ লাইন ক্লোজ করা হয়েছে আমি জানিনা। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মেট্রো পুলিশ কমিশনার তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই তদন্তে প্রাথমিকভাবে বশির ও শরিফের বিরুদ্ধে ওই হত্যাকান্ড নিয়ে বাণিজ্য এবং বেশকিছু অভিযোগের প্রমাণ মেলে। অতঃপর গত সোমবার রাতে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পদক্ষেপ হিসেবে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়।