বরিশাল
বরিশালে দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা প্রধান আসামীকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে রহস্যময় চার্জশিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানাধীন সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইছাগুড়া রাজগর এলাকার দলিল লেখক রেজাউল করীম রিয়াজ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার ওসি তদন্ত সগির হোসেন দীর্ঘ নয়মাস তদন্ত শেষে বাদী মনিরুল ইসলাম রিপনের অভিযুক্ত প্রধান আসামী হত্যার শিকার হওয়া রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আব্দুল জলিল, শাকিল, রায়হান, আবু নাইম ওরফে বাবুসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে বাবু জামিনে রয়েছে।
গতকাল তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউনিয়া থানা (ওসি) তদন্ত মোঃ সগির হোসেন আদালতে চার্জশিট প্রতিবেদন প্রদান করে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী নিহত রিয়াজের (চাকুরীজীবী) বড় ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের হত্যা মামলাটি তদন্তের নামে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সগির হোসেন বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ ও প্রধান আসামী লিজাকে রক্ষা করার মিশনে নামার বিষয়টি টের পেয়ে গত ২৩ই অক্টোবর অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই রহস্যজনক মামলা তদন্তের প্রতি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে না রাজি দিয়ে মামলাটি সিআইডি পুলিশ সদস্যদের দিয়ে তদন্তের দাবী করা হয়।
সেসময় উক্ত আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ মারুফ আহমেদ বাদীর আর্জির পরিপেক্ষিতে পরবর্তী মামলার তারিখ ১১ই নভেম্বর মামলার সকল সিডি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সগির হোসেনকে স্ব-শরীরে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন।
১১ই নভেম্বরে মামলার ধার্য তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা সগির হোসেন করোনাকে পুজি করে আদালতে আসা থেকে বিরত থেকে তিনি তড়িঘড়ি উক্ত আদালতের বিচারকের বদলির কথা শুনে গতকাল সোমবার নভেম্বর উক্ত আদালতে প্রধান আসামী আমিনা আক্তর লিজাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চার্জশিট প্রতিবেদন দাখিল করে গেছে। আমরা আগেও এই মামলার তদন্দের সন্তুষ্টি ছিলাম না। আজও প্রধান আসামীকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট প্রদান করায় সন্তুষ্ট নই তাই আগামী তারিখে না রাজির মাধ্যমে আবারো সিআইডি দ্বারা পুনরায় তদন্তের জন্য বিজ্ঞ বিচারকের দাবী জানানো হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নিজ বসত ঘরে স্বামী রিয়াজ ও স্ত্রী লিজা পৃথকভাবে থাকা অবস্থায় রিয়াজকে গলা কেটে হত্যা করে পুনরায় হত্যাকারীরা ঘরের সকল দরজা-জানালা বন্ধ থাকার মধ্যে থেকে বের হয়ে যায়।
১৯ই এপ্রিল কাক ডাকা ভোরে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ রাসেল, অফিসার ইনচার্জ ওসি নুরুল ইসলাম (পিপিএম) সহ বেশ কিছু পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যার রহস্য তদন্ত করার পাশাপাশি রিয়াজের লাশ উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
একই সময় হত্যার রহস্য জানার জন্য রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয় এবং পরবর্তীতে নিয়মিত রিয়াজ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। থানা থেকে হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বসির ও পরবর্তী এসআই মামুন হত্যা মামলার রহস্য খুঁজে বের করে নিয়ে আসার মূহুর্তে হঠাৎ করে রহস্যজনকভাবে বাদী রিপনকে অবগত না করে থানা থেকে অধিকতর তদন্তের নামে মেট্রো গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দপ্তরে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
সেসময় ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজাউল করীমের ততা¡বধানে ২০২০ সালের ২৩ই ফেব্র“য়ারী মোঃ সগির হোসেন রিয়াজ হত্যা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে। মামলার বাদী মনিরুল ইসলাম আরো অভিযোগ করে বলেন, রিয়াজ হত্যার পর থেকে লিজার পরকিয়া প্রেমিক ও রিয়াজের সহকারী মাসুম দফাদারকে আজ পর্যন্ত কোন তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেফতার করতে পারেনি।
এছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সগির হোসেন কোনদিন হত্যার ঘটনাস্থলে একদিনের জন্য যায়নি। অপরদিকে যাদেরকে হত্যাকারী বলে গ্রেফতার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি গ্রহণ করেছে সেখানে চার জনের দেয়া জবানবন্দিতে কারো কথার সাথে কারো কোন মিল না থাকায় তদন্তের নামে আসল আসামীকে রক্ষা করার মিশনে নেমেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা বুঝতে পেরে এবং মামলাটি সঠিক তদন্ত ও হত্যার ন্যায়বিচার পাবার জন্য বেশ কয়েকবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বরিশাল পুলিশ কমিশনারের প্রতি আহবান জানিয়েও আমরা ভাই হত্যা মামলা তদন্তে ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত কাউনিয়া থানা মোঃ সগির হোসেন বলেন, এই মামলার তদন্তকালে স্বামী রিয়াজ হত্যার সাথে জড়িত এরকম কোন প্রমাণ না পাওয়ার কারণে তাকে অব্যাহতি দিয়ে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছি।