বরিশাল সদর
বরিশালে জমি দখল নিতে কলেজ বন্ধের পাঁয়তারা, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক।। কলেজের নামে দেওয়া ৫০ শতাংশ জমি দখল নিতে কলেজ বন্ধের পাঁয়তারা শুরু করেন কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ডা. আরিফুর রহমান। এ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। গতকাল শনিবার এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সম্মুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।। খবর পেয়ে এসআই দুলালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সূত্রমতে, ২০০৯ সাল থেকে পাঠদানের অনুমতি নিয়ে নিজের দেওয়া ৫০ শতাংশ জমিতে বরিশাল নগরীতে গড়ে তুলেন ডা. আরিফুর রহমান কমার্স কলেজ। কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২ শতাধিক। শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১২ জন। নতুন করে ৫০ জনকে ভর্তিও করা হয়েছে। কিন্তু হুট করে কলেজটি বন্ধের ঘোষনা দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, কলেজের নামে দেওয়া ৫০ শতাংশ জমি সন্তানরা ছাড়তে নারাজ। যে কারণে পারিবারিক আদলে গড়ে ওঠা কলেজের বিভিন্ন পদে থাকা ডা. আরিফুর রহমানের ছেলে, মেয়ে, জামাতা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়ার কূটকৌশল করছেন।
ডা. আরিফুর রহমান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্য সচিব প্রফেসর নুরুল আমিন বলেন, নির্বাহী কমিটির সভাপতি ডা. আরিফুর ও তার ছেলে মেয়েরা কলেজ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু হঠাৎ করে তো বন্ধ করা যায় না। কলেজের কার্যক্রম অচল থাকায় ছাত্ররাও গালাগাল করে। যে কারণে তিনি গত ১৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা গ্রহণ করেনি। কলেজ বন্ধের প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আরো বলেন, তিনি গত ৬ বছর দায়িত্ব পালনকালে কলেজটির পাঠদানের অনুমতি শিক্ষাবোর্ড থেকে এনেছেন। কলেজের স্বীকৃতিও আনার প্রক্রিয়া চলছে।তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে কলেজের নিজস্ব স্থাপনা থাকতে হবে। এটি জানতে পেরে সভাপতির ছেলেমেয়েরা কলেজ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। কলেজের বিভিন্ন কমিটিতে সভাপতির ছেলে, মেয়ে এবং জামাতা রয়েছেন। অধ্যক্ষ বলেন, কলেজের ফান্ডে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা রয়েছে। বর্তমানে ২০০ এর বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এ অবস্থায় কলেজ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ শিক্ষকেরও বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।
কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, কলেজ বন্ধ হলে এখন তারা কোথায় যাবেন? কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বশিরুল হক বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন বন্ধ করে দেওয়ার খবরে শিক্ষার্থীদের মতো তারাও হতাশায় ভুগছেন। একই কথা জানিয়ে ওই কলেজের শিক্ষক মেহেদী হাসান ও রাকিবুল হাসান বলেন, কলেজের সভাপতি ডা. আরিফুর রহমান তাদের জানিয়েছেন কলেজ বন্ধ করে দেবেন। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ বছর পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্য কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করবেন। এ প্রসঙ্গে জানতে কলেজের সভাপতি ডা. আরিফুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হলে অবশ্যই বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় তাদের এর দায়ভার নিতে হবে। এভাবে হুট করে কলেজের কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।