বরিশাল
বরিশালে ছাত্রলীগ কর্মীর মামলায় কাউন্সিলরসহ ৪ জন কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ছাত্রলীগের চার কর্মীকে কুপিয়ে জখম ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ৪ আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৯ আগস্ট) বরিশালের বিচারিক হাকিম শারমিন সুলতানা তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন জিআরও এসআই কাইয়ুম।
এর আগে কাউন্সিলরসহ ৪ আসামিকে হত্যাচেষ্টা ও কুপিয়ে জখমের মামলার আসামি হিসেবে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান তিনি। তারা হলেন- মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান হোসেন সোহেল মোল্লা, মো. মিরাজ, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও কামরুল ইসলাম রিপন।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে প্রতিপক্ষের ছাত্রলীগের চার কর্মীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মী মো. ইমরান খান বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাউন্সিলরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও নামধারী আরও ১৫ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামি হিসেবে চারজনকে রোববার রাতে গ্রেফতার করে সোমবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কাউন্সিলর সোহেল মোল্লার নেতৃত্বে গ্রেফতার তিন আসামি ২৮ আগষ্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিপক্ষের ছাত্রলীগকর্মী রিমনকে পৌর এলাকার সোনামুখী আবির এন্টারপ্রাইজের সামনে পেয়ে কুপিয়ে জখম করে। তাকে উদ্ধার করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
কাউন্সিলরের নেতৃত্বে নামধারীসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা রামদা, চাইনিজ কুড়াল, জিআই পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে হামলা করে।
সেখানে তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দরজা বন্ধ করে রিমনসহ ছাত্রলীগকর্মী জেহাদ, আব্দুল্লাহ ও নোমান সরকারকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের মালামাল তছনছ করে। দরজা বন্ধ করায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
আহতদের মধ্যে ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহ জানান, তার বন্ধু রিমনকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা ও তার সহযোগীরা নির্যাতন চালায়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে কাউন্সিলর সোহেলের নেতৃত্বে কামাল, সোবাহান, মিরাজ, আল আমিন, আকাশসহ ২০/২৫ জন দা-লোহার পাইপ নিয়ে ঢোকে। এসময় তারা জরুরি বিভাগে থাকা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের বের করে দিয়ে চিকিৎসকের সামনেই আমাদের কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে।
যদিও গ্রেফতারের আগে কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা দাবি করেছিলেন অভিযোগকারীরা সবাই ছাত্রদলের নেতাকর্মী। তিনি বলেছিলেন, রোববার জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমার বাড়ির পাশে দোয়া ও খাবারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর নেতাকর্মীরা দেখতে পান, ছাত্রদলের একটি ছেলে দোয়া অনুষ্ঠান ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিড়ে ফেলছে। তারা ছেলেটিকে ধরে মারধর করতে উদ্যত হলে, কোনোভাবে সেখান থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিজের বাসায় নিয়ে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থাও করা হয়।
সোহেল মোল্লা দাবি করেছিলেন, পরবর্তীতে বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই খবর পান তার (কাউন্সিলর সোহেল) বাড়িতে ভাংচুর চালানো হচ্ছে। তখন তিনি স্থানীয়দের নিয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে, হামলাকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের সঙ্গে কাউন্সিলরের লোকদের সামান্য ধস্তাধস্তি হয়।
হাসপাতালে হামলার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইয়্যেদ মো. আমরুল্লাহ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে ভাংচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানিয়েছি।