বরিশাল
বরিশালে গরু চুরির সালিশি করে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিল মেম্বার!
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরায় গরু চুরির ঘটনায় সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল করিম রুবেলসহ স্থানীয় কয়েকজন সালিশিদারের বিরুদ্ধে। ২ মার্চ বিকেল ৪ টায় কাগাশুরা বাজারের ইলিয়াসের চায়ের দোকানে এ সালিশ হয়। সালিশি বৈঠকের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
জানা গেছে, গত ১ মার্চ নগরীর পশ্চিম কাউনিয়ার জুয়েল হাওলাদারের একটি গরু চুরি হয়। সেই গরুটি কাগাশুরার আনসার ছইয়াল, কশাই সোহেল, ভুলু ছইয়াল ও কাসেম জামাই গরুটি চুরি করে জবাই করে বিক্রি করেছে বলে জানতে পারে গরুর মালিক জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে জুয়েল আইনী পদক্ষেপ নিতে চাইলে তাৎক্ষনিক চোরচক্র শরনাপন্ন হন মেম্বার রুবেলের। তার আশ্বাসে পরের দিন সালিশি বৈঠকের ব্যাবস্থা করা হয়। রুবেল মেম্বারের নেতৃত্বে শহীদ মাঝি, ইলিয়াস, জসিম উদ্দিন খুসবো ও রুবেল তালুকদারের সমন্বয়ে কাগাশুরা বাজারের ইলিয়াসের চায়ের দোকানে বসে সালিশি বৈঠক। সালিশি বৈঠকে গরুর দাম নির্ধারন করা হয় ৫৫ হাজার টাকা। সেই টাকা আদায় করা হয় চোরচক্রের কাছ থেকে। একটি স্ট্যাম্পে সই রেখে গরুর মালিক জুয়েলকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সালিশদাররা। এতে কিছুটা মনক্ষুন্ন হলেও ওই টাকা নিয়ে চলে যান জুয়েল। এরপর সালিশি বৈঠকের মাধম্যে চোরচক্রকে বাঁচিয়ে বলে তাদের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন সালিশদাররা। এ নিয়ে ঘন্টাব্যাপী দরাদরি করার পর ২০ হাজার দিতে রাজি হয় চোরচক্রের সদস্যরা। ওই দিনই দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা। পরে গত মঙ্গলবার আদায় করা হয় বাকি ১০ হাজার টাকা।
এরআগেও ওই চোরচক্রের বিরুদ্ধে আল্লাহর নামে ছেড়ে দেয়া গরু জবাই করে বিক্রির অভিযোগে কাউনিয়া থানায় একটি মামলাও রয়েছে। সেই মামলায় তারা জামিনে রয়েছে।
চোরচক্র ও সালিশদারদের সাথে টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে রুবেল মেম্বারের একাধিক ফোনালাপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
গরুর মালিক জুয়েল বলেন- আমার একটি গরু চুরি হয়ে যায়। পরে জানতে পারি কাগাশুরার আনসার ছইয়াল, কশাই সোহেল, ভুলু ছইয়াল ও কাসেম জামাই গরুটি চুরি করে জবাই করে বিক্রি করেছে। আমি সেখানে গেলে স্থানীয় মেম্বারসহ কয়েকজন সালিশ বৈঠক করে মিমাংসার প্রতিশ্রুতি দেন। পরের দিন আমি গেলে সালিশি বৈঠকে আমার গরুর দাম নির্ধারন করা হয় ৫৫ হাজার টাকা। পরে গরু বিক্রি করেছি লেখা একটি স্ট্যাম্পে সই রেখে আমাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১৫ হাজার টাকা নেন সালিশদাররা। স্ট্যাম্পে সই রাখায় আমি আর কিছু বলতে পারিনি।
রুবেল মেম্বার টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বিকার করলেও নিজে কোন টাকা নেননি দাবি করে বলেন- গরুর মালিক ইলিয়াসের কাছে গিয়ে গরু চুরির বিষয়টি জানালে ইলিয়াস গরুটি জবাই করে বিক্রি করা হয়েছে বলে গরুর মালিককে জানায়। পরবর্তীতে ইলিয়াসসহ কয়েকজন মিলে গরুর মালিকের সাথে চোরদের সমন্বয় করেছে। পরে আমাকে কল দিলে আমি গিয়ে দেখি একটি স্ট্যাম্পে হাতে কি কি যেন লেখা হয়েছে। কি লেখা ছিল আমি জানিনা। সেই স্ট্যাম্পে আপনার সই আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- কে বলছে আমার সই আছে? সেই স্ট্যাম্পের কপি প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে জানালে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
তিনি বলেন- আমি জানতে পারলাম চোরদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছে সালিশদাররা। তবে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছে চোরচক্র। সেখানে বসেই ১০ হাজার নেয়া হয়। আর বাকি ১০ হাজার টাকা নেয়া হয় মঙ্গলবার। কিন্তু আমি এক টাকাও নেইনি। সব করেছে ইলিয়াস ও শহীদ মাঝি।
কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন- বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।