বরিশাল
বরিশালে কার্বন নির্গমন কমানোর দাবিতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের প্রতীকি যাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের কয়েকটি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার কলাগাছের ভেলায় চড়ে কীর্তনখোলা নদী বেয়ে অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সেই ছোট্ট ভেলায় তুলে নিয়েছে ছাগল-হাঁস-মুরগি আর সামান্য সম্বল। তাদের হাতের প্লাকার্ডে লেখা, ‘আমাদেরকে জলবায়ু উদ্বাস্ত হিসেবে স্বীকৃতি দাও’।
নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত সমব্যথী মানুষের মানববন্ধনের ব্যানারে লেখা ‘জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করো আমাদের যাবার জন্য আর কোনো গ্রহ নেই! বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের পামেরহাট সংলগ্ন কীর্তনখোলার তীরে আজ বুধবার বেলা ১২টায় প্রতিকী যাত্রা পালন করা হয়েছে। আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নির্গমন কমানোর সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের দাবিতে ওই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
প্রান্তজন, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাবিøউজিইডি) ও উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)-এর যৌথ উদ্যোগে ওই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম শাহজাদা বলেন, বায়ুমন্ডলে কার্বনের ঘনত্ব পৃথিবীর সহনক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ উদ্বাস্ত হয়ে যাচ্ছে।
খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, নদী ভাঙন ও লবণাক্ততার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, উন্নত বিশ্বের প্রশ্রিুতি অনুযায়ী প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করার পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইপিসিসি সতর্ক করে দিয়েছে যে, জলবায়ু দুর্যোগ ঠেকানোর সর্বশেষ সুযোগদ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এখনই কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ না নিতে পারলে একুশ শতকের শেষ নাগাদ মানবসভ্যতা রক্ষা করা যাবে না। কিন্তু উন্নত বিশ্বের নেতৃবৃন্দ শুধুমাত্র দিয়ে যাচ্ছেন। এমন একটি জরুরি অবস্থায় জাপান ও অস্ট্রেলিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উপকূলের ঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়েই চীন, জাপান ও মার্কিন কোম্পানিগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে আরো বেশি হারে বিনিয়োগ করছে। আমাদের জীবন নয়, মুনাফাই তাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছে।
সমাবেশ ও উদ্বাস্ত যাত্রায় বক্তব্য দেন সাইফুল ইসলাম মনির, সফিকুর রহমান, বাদল খলিফা, শুকতারা বেগম, নিজাম খলিফা, মোঃ জালাল হাওলাদার, বাবুল হাওলাদার, আলামিন হাওলাদার, সোহেল সিকদার, রিয়াজ হাওলাদার, মনির হাওলাদার প্রমুখ।