বরিশাল
বরিশালে কাঁচাবাজারে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বহুমুখী পাইকারী কাঁচাবাজারের সামনে থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী বন্ধের দাবীতে বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অত্র বাজারের আড়ৎদার, পাইকারী-খুচরা ব্যবসায়ী এবং বাজারে আসা বিভিন্ন যানবাহনের চালকসহ প্রায় ৭২ জনের স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগটি দেয়া হয়।
কিন্তু লিখিত অভিযোগ দেয়ার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী বন্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় ভুক্তভোগীরা একপ্রকার হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ১০নং ওয়ার্ডস্থ বরিশাল বহুমুখী সিটি পাইকারী কাঁচাবাজারে দীর্ঘ বছর যাবৎ আড়ৎদার ও দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা ব্যবসা করে আসছেন।
প্রতিদিন রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে পাইকাররা এই বাজারে তরকারী নিয়ে আসেন। আর ভোররাত থেকে বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কাঁচাতরকারী নিতে ভিড় জমায় এই আড়তে।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পাইকার-আড়ৎদার-খুচরা ব্যবসায়ীদের বিকিকিনির মধ্যে বিষফোঁড়া হিসেবে আর্বিভাব ঘটে মানিক নামে এক ব্যক্তির।
মানিক আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনের লেবাস লাগিয়ে প্রতিদিন এই বাজারে আসা ট্রাক, পিকআপ, অটো, ভ্যান ইত্যাদি যানবাহন থেকে অবৈধভাবে ২০/৩০/৫০/৭০/১০০ টাকা হারে চাঁদা তোলে। আর অবৈধভাবে চাঁদার মাধ্যমে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় মানিক।
তার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে বাজারে আসা খুচরা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।
ভুক্তভোগী জনসাধারণের একটাই প্রশ্ন অবৈধভাবে চাঁদাবাজী করা মানিকের খুঁটির জোর কোথায়? কোন শক্তির বলে, কার ঈশারাতে মানিক অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে? খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বছর বরিশালের কিছু স্থানীয় পত্রিকাতে এই চাঁদাবাজ মানিকের চাঁদা তোলার ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হলে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুলের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি অবৈধ চাঁদা উত্তোলন নিষিদ্ধ করেন।
বর্তমানে অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, ১০নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাসের নাম ব্যবহার করে এই চাঁদাবাজি করছে।
চাঁদাবাজ মানিক নীরব হোসেন টুটুলের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ চাঁদা তোলা অব্যাহত রেখেছেন। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০ নং ওয়ার্ড আ’লীগের অলৌকিক ক্ষমতার কারনে ভুক্তভোগীরা এই অবৈধ চাঁদাবাজ মানিকের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতেও সাহস পাচ্ছেনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মানিকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এ বিষয়ে ওয়ার্ড আ’লীগের সাধরান সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাস জানান, মানিক দীর্ঘ বছর যাবৎ এই বাজার থেকে টাকা উঠায় আমি জানি। আমি তার রিযিক নষ্ট করতে চাইনা।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে চাঁদা না দিতে পারলে মানিক অটো, ভ্যানসহ বিভিন্ন গাড়ি থেকে মালামাল নামিয়ে অন্য গাড়িতে তুলে দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আর তার এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই ভুক্তভোগিরা অবৈধ চাঁদাবাজী বন্ধ করতে এবং চাঁদাবাজদের রুখতে একাট্টা হয়েছেন।
ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, বহুমুখী পাইকারী কাঁচাবাজারটি বিআইডব্লিউটি এর জমিতে গড়ে উঠেছে।
আর মানিক অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করায় সরকার প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অবৈধ চাঁদা তোলার কথা শুনেছি। এখানকার কিছু লোক পেশি শক্তির বলে চাঁদা উত্তোলন করছে। খুব শীঘ্রই এদের সনাক্ত করে চাঁদাবাজীর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হবে।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোঃ রাসেল জানান, অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।