বরিশাল
বরিশালে করোনা চিকিৎসায় নারীদের জন্য আলাদা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা। পিসিআর ল্যাবেও শনাক্তের হার গত জুলাই থেকে উর্ধ্বমুখী। মঙ্গলবার শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলো ১২৩ জন করোনায় আক্রান্তসহ ৩২৭ জন রোগী।
সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ওয়ার্ডে মারা গেছে ১৪ জন রোগী। এর আগের দিন মৃত্যু হয়েছে করোনা ওয়ার্ডের ইতিহাসে সর্বাধিক ২৩ জন রোগীর।
গত সোমবার রাতে মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের সব শেষ রিপোর্টে নমূনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ছিলো ৪৩.১৫ ভাগ। এর আগে রবিবারের রিপোর্টে করোনা শনাক্তের হার ছিলো ৫৫.৮৫ ভাগ।
শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে রোগীর চেয়ে কম ৩০০টি। আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন ২৫ জন রোগী, ১৫ জন পাচ্ছেন হাই ফ্লো ন্যাসল ক্যানোলা সেবা এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবার আওতয় রয়েছেন ৮৫ জন রোগী। বাকি রোগীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। যথা সময়ে অক্সিজেন সুবিধা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন মুমূর্ষ রোগীরা।
এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত জুলাই মাসে জেনালের হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড অন্যত্র স্থানান্তর করে সেখানে ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড চালু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে এবার নগরীর কালী বাড়ি রোডের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নারী রোগীদের জন্য ২০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাশাপাশি নগরীর কালিজিরা এলাকার বেসরকারি সাউথ এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জেলা প্রশাসনের এক বিশেষ সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে ২০টি করে মোট ১৮০টি শয্যা করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, সরকার সারা দেশের সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি করে শয্যা করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি করে শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে কার্যক্রম শুরু হবে। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রেও নারী করোনা রোগীদের জন্য ২০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস, শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম, শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজর অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান, বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম, সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন, সাউথ এপোলো মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল হক, আরিফ মেমরিয়াল হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গৌতম বাড়ৈ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।