বরিশাল
বরিশালে এখনও প্রাথমিকের হাজারো শিক্ষার্থী বই পায়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ চলতি বছরের প্রথম তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত নতুন বই হাতে পায়নি বরিশালের দু’টি উপজেলায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এতে তাদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে চরমভাবে। সন্তানরা যথা সময়ে বই না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তাদের অভিভাবকরা।
এদিকে, শতভাগ শিক্ষার্থীকে নতুন বই দিতে না পাড়ার ব্যর্থতা ঢাকতে নানা গোজামিল তথ্য দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা।
বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে সারা দেশে বই উৎসব রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার এই নিয়ম রক্ষা করতে পারেনি বরিশাল শিক্ষা বিভাগ। খোদ বরিশাল জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রাথমিক বিভাগের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত নতুন বই হাতে পায়নি। বছরের প্রথম তৃতীয় মাসেও নতুন বই না পাওয়ায় পড়ালেখায় ছন্দ পাচ্ছেন না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কবে নাগাদ ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বই পাবেন তাও নিশ্চিত করে কিছু জানতে পারছেন না অভিভাবকরা।
এতে ক্ষুব্ধ তারা। এই অবস্থা শুধু কালক্টরেট স্কুলেই নয়; জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে সদর ও গৌরনদী উপজেলার প্রাথমিক পর্যায়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনও নতুন বই পায়নি।
গৌরনদীর পূর্ব বাউরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম সোমবার বিকেলে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ওই সব শ্রেণির নতুন বই দেওয়ার কথা রয়েছে।
বই না পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, বই না পাওয়ায় তারা হোমওয়ার্ক করতে পারছেন না। এতে তারা পিছিয়ে পড়ছেন। বই পেলে তাদের জন্য অনেক ভালো হয়।
অভিভাবকরা বলেন, বই না পাওয়ায় তাদের সন্তানরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে। বছরের প্রথম তিন মাসেও সন্তানের হাতে বই দিতে না পাড়ায় চরম হতাশাগ্রস্ত তারা। এতমাস পর বই পেলে তাদের সন্তানদের উপর অনেক চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খন্দকার অলিউল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো বই পাননি তারা। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই পেয়েছেন। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তৃতীয়-চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অংক ও বাংলা বই পেয়েছেন। মার্চে অন্যান্য শ্রেণির বইয়ের আংশিক পেয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সংশয়ের মধ্যে আছেন। বইগুলো দ্রুত প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীরা বই না পাওয়ায় ক্লাশে পড়াতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একই স্কুলের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর বিপ্লব কুমার ভট্টচার্য্য।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১০ উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে ১২ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বরিশাল সদরেই ১ লাখ ১৯ হাজার বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। গৌরনদী উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও তাদের বই দেয়া হয়েছে দাবি করে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার বলেন, গৌরনদী উপজেলার বই মুন্সিগঞ্জ থেকে এসেছে। বরিশাল সদরের বই ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে আসছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার কথা বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ইতোমধ্যে বই চলে আসার কথা। কোনো কারণে এখন পর্যন্ত না এলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই এনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবেন, যাতে কোমলমতি শিশুদের কষ্ট না হয়।